সকল সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ্তায়ালা এবং তিনি তাঁর বান্দা হযরত আদম (আ.)কে দুনিয়ার বাদশা করে এ ধরাধামে পাঠিয়েছেন। মানব জাতিকে মহান সৃষ্টিকর্তা অন্য সব সৃষ্টি থেকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন, যার প্রমাণ আদি মানব হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করার পর সকল ফেরেস্তাকে আদেশ করেছিলেন আদমকে সেজদা করতে। সকল ফেরেশ্তা আদমকে সেজদা করলেও একমাত্র ইবলিস আদমকে সেজদা করা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ্পাকের অভিশপ্ত হয়ে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়ে ওই দিন ইবলিস আদম জাতিকে ক্ষতি করার জন্য আল্লাহ্র কাছে ফরিয়াদ করে এবং আল্লাহ্ তার ফরিয়াদ মঞ্জুর করেন এবং এ সময় আল্লাহ্ রাব্বুল আল আমিন ইবলিসকে বলেছিলেন- ‘তুই আদম জাতের কোন ক্ষতি করতে পারবি না, যারা আমার কাছে সাহায্য চাইবে।’ মূল কথা হলো- শয়তান যতই আদম সন্তানের ক্ষতি করতে চেষ্টা করুক না কেন শয়তান তা পারবে না। যারা আল্লাহ্র কাছে বাঁচার জন্য সাহায্য চাইবে, শয়তান ওই বান্দার সামান্যতম ক্ষতি করতে পারবে না।

আল্লাহ্পাক তাঁর সৃষ্টি আদম জাতিকে এ ধরাধামে পাঠিয়েছেন পরীক্ষার জন্য যে, বান্দা কতটুকু তাঁর বাধ্য থাকে বা অবাধ্যতা প্রদর্শন করে ধৃষ্টতা দেখায় তার জন্য। মূলত: একজন সত্যিকার মুসলমানের জন্য দুনিয়া একটা খেলাঘর মাত্র। মানুষ কতদিন আর বেঁচে থাকে! বড়জোর ১০০ বছর বা তার সামান্য একটু বেশী। তবে তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারেনি এবং পারবেও না। এখানে পবিত্র র্কোআনের সূরা আন্ নূর এর ৫৫ নং আয়াত প্রযোজ্য। আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, তাদের সাথে আল্লাহ্তায়ালা ওয়াদা করেছেন, তিনি জমীনে তাদের অবশ্যই খেলাফত দান করবেন- যেমনিভাবে তিনি তাদের আগের লোকদের খেলাফত দান করেছিলেন, যে জীবনবিধান তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন তাও তাদের জন্য সুদূর করে দেবেন। তাদের ভীতিজনক অবস্থার পর তিনি তাদের অবস্থাকে শান্তিতে বদলে দেবেন, (তবে এ জন্যে শর্ত হচ্ছে) তারা শুধু আমারই গোলামী করবে। আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না ও এর পরও যে (এবং যারা) তার নেয়ামতের নাফরমানী করবে তারাই গুনাহ্গার (বলে পরিগণিত হবে)।’

মানুষ একমাত্র আল্লাহ্রই ইবাদত করবে এবং বান্দার যা চাওয়ার তা একমাত্র আল্লাহ্র কাছেই চাইবে। মানুষের চিন্তা করা উচিৎ যে, তারা কোথায় ছিল, কোথায় আছে এবং কোথায় যাবে এবং পেছনে কে কলকাঠি নাড়ছেন। ওই মহাপ্রভূ আল্লাহ্ই সব কিছু করছেন এবং তার নির্দেশ ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেন, ‘(হে নবী), তুমি বলো, হে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্, তুমি যাকে ইচ্ছে তাকে সাম্রাজ্য দান করো, আবার যার কাছ থেকে চাও তা কেড়েও নিয়ে যাও, যাকে ইচ্ছে তুমি বিনা হিসেবে জীবনোপকরণ দান করো।’ -(সূরা আল্ ইমরান, আয়াত নং ২৬ এবং ২৭)

মহান আল্লাহ্তায়ালা আদম সন্তানকে একটা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এ আদম জাত পৃথিবীর খলিফা। আদম জাতের পূর্বে মহান আল্লাহ্পাক জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করে এ ধরাধামে পাঠাবার পরে তারা আল্লাহ্র অবাধ্য হয়ে যায়। আল্লাহ্তায়ালা মনুষ্য জাতিকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে তাদেরকে সত্য ও সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসুল প্রেরণ করেন। তিনি যুগে যুগে এবং প্রত্যেক জাতিকে তাঁর পথে নেবার জন্য পাঠিয়েছেন বলে পবিত্র র্কোআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। নবী ও রাসূলের সঠিক সংখ্যা কত তার কোন প্রমাণ নেই। তবে আমরা সাধারণত: যা জানি তা হলো, ১ লাখ বা দু’লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর এ দুনিয়ায় আগমণ করেছেন। এসব নবী ও রাসুলগণ মানুষ জাতিকে মহান আল্লাহ্পাক সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়েছেন। পৃথিবীর আদি মানব ও মানবী হযরত আদম ও হাওয়া। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে অগণিত নবী ও রাসূল মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য আগমণ করেছেন। তবে সর্বশেষ নবী ও ধর্মপ্রচারক হলেন হযরত মোহাম্মদ (সা:)। আল্লাহ্পাক তাকে মহাগ্রন্থ র্কুআন উপহার দিয়েছেন। এ পবিত্র র্কোআনের মাধ্যমে নবী (সা.) মানুষ জাতিকে সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। পবিত্র র্কোআন হচ্ছে মহান আল্লাহ্পাকের নিজের কথা বা বাণী। সূরা আল বাকারা এর ২৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর নিজের এবং তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে এরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ্ তায়ালা, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ্ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনাদি, অনন্তকালব্যাপী বিরাজমান। তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশসমূহ ও জমীনে যা কিছু আছে তার সব কিছুরই একচ্ছত্র মালিকানা তাঁরই। কে এমন আছে যে, তাঁর দরবারে বিনা অনুমতিতে কিছু সুপারিশ পেশ করবে? তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছুই তিনি জানেন। তাঁর জানা বিষয়সমুহের কোন কিছুই (তাঁর সৃষ্টির) কারো জ্ঞানের সীমা, পরিসীমার আয়ত্ত্বতাধীন হতে পারে না, তবে কিছু জ্ঞান যদি তিনি কাউকে দান করেন (তবে তা ভিন্ন কথা), তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য আসমান ও জমিনের সব কিছুই পরিবেষ্টন করে আছে। এ উভয়টির হেফাজত করার কাজ কখনও তাঁকে পরিশ্রান্ত করে না। তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান।’-(সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৫৫)।

দুনিয়াতে কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ্র অস্তিত্ব নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকে বেশ বিদ্বান বা জ্ঞানী বলে মনে করছে। আজ পৃথিবীতে শোষক আর শোষিতে যুদ্ধ চলছে। আর একদিকে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বস্ত এক দল। অন্য দিকে কম্যুনিষ্ট বা নাস্তিকদের এক দল। সমাজতন্ত্রের সস্তা বুলি দিয়ে একদা বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্রে ওই সব ব্যক্তিরা সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত: মনুষ্য সৃষ্ট কোন আইন দ্বারা এ দুনিয়ায় বসবাসকারী কারো মঙ্গল আসতে পারে না। তার প্রমাণ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন। আজ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরা-টুকরা হয়ে গেছে এবং চীন ভিন্নপথে হাঁটছে। মূলত: কোন নাস্তিকদের কোন ফর্মূলা দিয়ে কোন সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। মূলত গণতন্ত্র সব চেয়ে খারাপতন্ত্র। গণতন্ত্রের নিত্য নতুন ধনীক-বণিকে সৃষ্টি হয়। একদল রাষ্ট্রক্ষমতায় যখন থাকে তখন তারা রাষ্ট্রের অর্থ-সম্পদ লুট-পাট করে বা চুরি করে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে যায়। এর পর যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তারা আবার পূর্বের সরকারের ন্যায় লুট-পাট বা চুরি করে ধনীতে পরিণত হয়। এভাবেই যখন কথা বলেন- তখন যেন দেশের সাধারণ মানুষের জন্য মায়া-মমতায় গদগদ হয়ে যায়, এমন সব মিথ্যের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের জোয়ার চলছে। গণতন্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের সামান্যতম উন্নতি হতে পারে না। যা আমরা বার বার দেখে আসছি। পথ একটাই এবং তা হলো আল্লাহ্ এবং তার নির্দেশিত পথ। প্রচলিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে যা চলছে এবং তা যদি চলতে থাকে- তবে তা একদিন রুখে দাঁড়াবে দেশবাসী।

প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা দ্বারা দেশের কেবল সাধারণ মানুষ নয়, কোন শ্রেণীরই সমস্যার সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। আজ বিশ্বের প্রয়োজন আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের আইন দ্বারা কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা দ্বারা মানুষ পাচ্ছে টা কি? গণতন্ত্রের নামে হচ্ছেটা কি? এক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে লুট-পাট করে অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে যায়। আবার এক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে এবং তারাও পূর্বের ন্যায় দেশ ও জনগণের অর্থ সম্পদ লুট-পাট করে অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ে। জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই হচ্ছে না। বরং তারা দিনের পর দিন আরো গরীব হয়ে যাচ্ছে। এ সব জাতীয় চোরদের বিচারও হয় না। কেননা মানুষ সৃষ্টি আইনে তাদের বিচার করা যায় না। কেননা যারা আইন করে রেখে ছিল তারাও চোর এবং চোররা চোরের পক্ষেই আইন করে রেখেছে। হাজার-হাজার কোটি টাকা চুরি করলে তারা জামিন পেয়ে যান কিন্তু যারা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন তাদের বিচার নেই।
আজকে যারা ইসলামী আইন বা সমাজ ব্যবস্থার বিরোধীতা করছে, তারা কারা? ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা যদি থাকতো তবে আজকের সমাজে এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সমাজসেবক, জনপ্রতিনিধিসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অনেকেরই হাত আস্ত থাকতো না। চুরির দায়ে অনেকেরই হাত কাটা যেত। তাই এরা ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে ভয় পায় এবং বিরোধীতা করছে। এখানে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হলেই ইসলামী বিচার ব্যবস্থার আসল রূপ বের হয়ে আসবে। একদা একজন মহিলাকে হাজির করা হয়েছিল রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দরবারে এবং ওই মহিলা ছিল খুবই উঁচু বংশের একজন। ওই মহিলাকে বিচারের জন্য আনা হলে সকলেই ওই মহিলাকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য পরিকল্পনা করছিল এবং সাহস করে একজন সাহাবা নবী (সা.) এর কাছে বললেন যে, এ মহিলা উঁচু বংশের তাই তাকে ছেড়ে দেয়া যায় কি না। তাদের কথা শুনে হুজুরে পাক (সা.) তাদেরকে বললেন, এ কারণেই পূর্বের অনেক সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গেছে যে, তারা গরীব মানুষের বিচার করতো ধনীদের বিচার করতো না। বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তাদেরকে বললেন, ‘যদি আমার মেয়ে ফাতিমাও এ রকম অপরাধ করতো তবে তার হাত কাটার আদেশ দিতাম।’
বর্তমানের বিচার ব্যবস্থা দ্বারা সাধারণ মানুষ সামান্যতম উপকার পাচ্ছে না, যাদের টাকা আছে তারাই বিচার পাচ্ছে এবং তাদের পক্ষে বিচার ব্যবস্থার রায় হচ্ছে।

মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক, ফোন নং- ০১৭১-০৮৮৩৪১৩,