গনতন্ত্র মানে বাক স্বাধীনতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, সৃজনশীল নাগরিক হিসাবে নিরাপদে ও গর্বের সাথে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা।মতামতের ভিন্নতা এবং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে যখন ঐক্যের সমন্বয় ঘটে ঠিক তখন জাতি স্বাধীনতার সুফল লাভ করে। পুলিশ বাহিনী , সশস্ত্র বাহিনী , রাজনীতিবিদ বা সমাজের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যখন ভয়ংকর রুপ ধারন করে তখন সেখানে গনতন্ত্র জাতির জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায় বিধায় অপ্রিয় সত্য কথা বা সামাজিক আলোচনার বিষয়সূচি থেকে বঞ্চিত হয় জাতি। সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যক্তিস্বত্তা ও সুসম্পর্ক যেমন নষ্ট হয় তেমন হারাতে বসে মনুষ্যত্ব,বিলীন হয় গনতন্ত্র, আর ঠিক তখনই সৃষ্টি হয় দেশে অরাজকতার।

স্বাধীনতা অর্জনের ৪৬ বছর পরেও গনতন্ত্রের সর্বোত্তম চর্চা আমাদের সমাজে হয়নি। আজ অন্ধকারে থাকা কিছু সত্যকে আলোকের সম্মুখে তুলে ধরতে চাই দেশ ও জাতির সার্বিক মঙ্গলের জন্য। একটি উন্নয়নশীল জাতির বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করা হচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য। সশস্ত্র বাহিনীকে সঠিকভাবে কাজে না লাগিয়ে ব্যরাকে রাখা হয়েছে অনেকটা “স্লিপিং টাইগারের মত”। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, পার করছেন তাঁরা তাঁদের চাকরির মেয়াদ আর মাঝে মধ্যে অকেশনালি সরকারের বা দেশের কিছু কিছু কাজে সাহায্য করা, নিজেদের এ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ন্ত্রন করা, বিভিন্ন মিশনে যাওয়া এবং ডিজিএফআইকে কাজে লাগানো (সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কারনে, অকারনে এবং তাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারের সুবিধানুযায়ী) —এই ভাবেই চলছে দিন। তাঁরা বছরে কয়েকবার যেমন বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে “সো আপ” করেন দেশ ও জাতিকে সান্ত্বনা দেবার জন্য যে আমরা আছি। “ আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি”।

এমনটি যদি তাঁদের কমিটমেন্ট হয় তবে জাতির কাছে আমার শুধু এতটুকু বলার আছে তা হল কেন সশস্ত্র বাহিনীকে ঢাকার ভিতরে বা দেশের বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে (যেখানে কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্টান বা হাসপাতাল গড়ে উঠার কথা) রাখা হয়েছে? তাঁদেরকে কেন দেশের অন্যান্য এলাকাতে রাখা হয়নি? কিন্তু যদি সত্যিকারে তাঁদেরকে সোনার বাংলা গড়ার এবং অভ্যন্তরীন ও বহিঃশত্রুর থেকে দেশকে মুক্ত রাখার জন্য বেতন দেওয়া হয় দেশের মেহনতি মানুষের উপার্জিত অর্থ থেকে তবে তাঁদেরকে অবশ্যই সক্রিয় ভাবে কাজে লাগাতে হবে। আর দেরি নয়, সময় এসেছে ভাবার এবং কিছু করার। সাধারণত আমরা এই পরিস্থিতিতে বলতে পারি বাংলাদেশে এই মুহুর্তে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হবে না।হবে হয়তবা সেদিন, যেদিন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সুশিক্ষা এবং দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারবে দেশবাসীর সাথে একত্রিত হয়ে। জনগনের প্রতিনিধির কাছে দেশকে হস্তান্তর করতে পারবে, ঠিক তখন থেকে শুরু হবে বহিঃশত্রু থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার কাজ। কারন তখন সবার নজর পড়বে সোনার বাংলার ওপর। সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যরাকে বন্ধি করে না রেখে সোনার বাংলা গড়তে সরাসরি কাজে লাগানো হোক।
আফসোস! গনতন্ত্র মানে যদি ঘুষ, দুর্নীতি, অরাজকতা, নকল, অবিচার এসব হয় তাহলে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামলে গনতন্ত্রের অবমাননা কেন হবে? এটা কি জাতির জন্য ‘জোকস’ ? না কি অন্য কিছু! গনতন্ত্র কাগজে, কলমে বা মুখে বললেই কি হবে ? এর জন্য দরকার সর্বোত্তম প্রাকটিস এবং কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে। অনেকটা নামে মুসলমান আর কাজে বেঈমান হলেতো চলবে না, লোক দেখানো কাজ আর কতদিন এসব চলবে? ৪৬ বছর কি যথেষ্ট নয়? আর কতদিন চলবে এসব ধান্দাবাজি ? সময় এসেছে সবাইকে একসাথে কাজে লাগানোর। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে কতজন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য রিটারমেন্টে গিয়েছেন অথচ যে কাজের জন্য তাঁরা চাকরিতে ঢুকেছিলেন তা করার সুযোগ তাঁদেরকে দেয়া হয়নি। ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে হয়, ইংল্যান্ডের প্রিন্স চার্লস তাঁর জন্ম হয়েছিল রাজা হবেন ইংল্যান্ডের, কিন্তু তা হবার আগেই তিনি রিটারমেন্টে গেলেন। কারন তাঁর মা এখনো জীবিত, তবে হ্যাঁ তিনি রিটারমেন্টের পরে সে দায়িত্ব পালন করবেন হয়তবা যদি তাঁর মা মারা যান তাঁর আগে, তাছাড়া তিনি রাজপরিবারের সদস্য, তাঁদের এসব মানায়। তিনি বর্তমান সময় পার করছেন চ্যারিটি কাজের মধ্য দিয়ে, তেমনটি তো হতে পারে না বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রে! তাঁরা মিশন করে বেড়াচ্ছেন, এদিকে তাঁদের নিজের দেশের আভ্যন্তরিন হাজারো সমস্যা অথচ তাঁদেরকে সেই কাজে না লাগিয়ে পাঠানো হচ্ছে বাইরের মিশনে। আমার কাছে এটা নিছক কিছুটা ফ্যানি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। বর্তমান রাজনীতির অবস্থা হয়েছে আরো জঘন্য। বাবা- মা বা দাদা দেশের মন্ত্রী ছিলেন এখন বংশের চোদ্দগুষ্টি সেটা ভোগ করছেন। তারা ভুলে গেছেন বাংলাদেশে ১৭ কোটি লোকের বাস এবং তাদেরও একটা অধিকার রয়েছে তাঁদের জন্ম ভুমির উপর। এটা কি গনতন্ত্র ?নাকি রাজতন্ত্র ? নাকি ভন্ডামি তন্ত্র? নাকি ভোগতন্ত্র?। কবে না শুনি যে বর্তমান যারা জেনারেল, সচিব বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আছেন তাঁদের ছেলে/মেয়ে পরে সেই পোস্ট দখল করছেন জন্মসূত্রে। কী হচ্ছে দেশে? আর কতদিন চলবে এসব অরাজকতা? এই অত্যাধুনিক যুগে, যুদ্ধ যদি শুরু হয়, তবে ছোটখাটো অস্ত্রের দরকার হবে কি, যেখানে রাসয়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্র বা একটি কেমিকাল গ্যাস ছাড়লে শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা পৃথিবী ধংস হবে, সেখানে বহির্বিশ্বের আক্রমনের কথা চিন্তা না করে, আপাতত দেশের ভিতরের যুদ্ধে জয় লাভ করা হোক বাংলদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মিশন এবং ভিশন। একই সাথে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি থেকে নিজেদের এবং দেশের অরাজকতা দুর করতে জাতির পিতার কন্যাকে সরাসরি সাহায্য করুন। রাজনীতিবিদের বিষয় কিছু না লিখলে পুরো সত্যকে তুলে ধরা হবে না। তারা নিজেরাও জানেন না তারা কী করছেন,তারা দেশকে ধ্বংস এবং অন্ধকারে ফেলে নিজেরা লুটপাট করছেন।বিএনপির সবাই এখন জেল হাজতে দুর্নীতির কারনে, যারা ক্ষমতায় বর্তমান তারাও কিন্তু সেই একই কাজগুলো করছেন। পরে ক্ষমতাচু্ হলে তারাও জেল হাজতে যাবেন।জাতির পিতার কন্যার কাছে অনুরোধ, আপনার বাবার স্বপ্ন ছিল সত্যিকারে সোনার বাংলা গড়ার। আপনি দায়িত্বে যখন আছেন দয়া করে দু্র্নীতিগ্রস্থ সবাইকে নিজের হাতে জেল হাজতে ঢুকিয়ে কিছু ভালো কাজ করুন।

ভালো মানুষের সাথে হাতে হাত রেখে মৃত বাবার স্বপ্নকে কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করে যান। প্রায় একযুগের বেশি সময় দেশ বিদেশের গণ্যমান্য লোকদের সাথে উঠাবসা করে ভালো যা কিছু শিখেছেন তাতে আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন দেশকে সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করতে। একজন গনতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসাবে সত্য কথা গুলো লিখলাম ইচ্ছাকৃত ভাবে, আশা করি বিষয়গুলো বিতর্ক তৈরি করবে। একই সাথে দেখি বাংলাদেশে আদৌ গনতন্ত্র আছে কি? নাকি এই অপ্রিয় সত্য কথা লেখার কারণে দেশে আসা বন্ধ হয়ে যাবে আমার? এখনো কিছু লোক আছে যারা সত্যিকারের গনতন্ত্রে বিশ্বাসী, তাঁদের নেত্রীত্বে দেশের সবাইকে একত্রে কাজে লাগিয়ে সুশিক্ষার মধ্য দিয়ে ডিজিটল পদ্ধতিতে কাগজের টাকা মুক্ত সোনার বাংলা গড়াই হোক জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে।
Rahman.Mridha@ownit.nu