মাদকবিরোধী অভিযানে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে তার সঙ্গে টেলিফোনে শেষ কথোপকথনের যে অডিও রেকর্ড তার পরিবার প্রকাশ করেছে, তা সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।তিনি বলেছেন, অডিও রেকর্ডটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে আনাচ্ছি । আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট এটি তদন্ত করে দেখছে।

রোববার সকালে সিদ্ধেশ্বরীতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনসচেতনতা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, কোনো হত্যা বা অ্যাক্সিডেন্ট আমাদের তদন্তের বাইরে নয়। সব হত্যার বিষয়ে তদন্ত হবে। যেখানে যা দরকার সেটা করা হবে।মাদক নির্মূলে গত মাস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যাকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা।তাদের সমালোচনার মুখেও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে আসছেন।এর মধ্যেই টেকনাফের যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামের পরিবার অভিযোগ তুলেছে, তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।বক্তব্যের সপক্ষে মৃত্যুর আগে একরামের সঙ্গে টেলি কথপোকথনের একটি অডিও টেপ প্রকাশ করেছে তার পরিবার, যা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, অধ্যাপক, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাও কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানিকে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড আখ্যায়িত করে বলেছেন মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষের সমর্থন আছে, কিন্তু এমন মৃত্যু কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। রোববার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযানে কেউ নিহত হোক এটি আমাদের কাম্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হল মাদকের ভয়াবহতা থেকে সবাইকে সরিয়ে আনা।যত দিন না দেশ থেকে মাদক নির্মূল হবে, তত দিন মাদক চোরাকারবারিদের তালিকা হালনাগাদ হতে থাকবে এবং অভিযানও চলবে বলে জানান কামাল।তিনি বলেন, যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে। মেধা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সে জন্যই মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।এ অনুষ্ঠানে বেলুন উড়িয়ে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী ফেস্টুন বিতরণ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষের সমর্থন থাকলেও’ কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানিকে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, অধ্যাপক, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন, যা অভিহিত করা হচ্ছে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বলে।গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় এমন মৃত্যু কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানে প্রদত্ত জীবনের অধিকার এভাবে কেড়ে নেওয়া যায় না।সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের পাঠানো ওই বিবৃতিতে সই করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, লেখক-অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, কবি নির্মলেন্দু গুণ, লেখক-প্রকাশক মফিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত মাসের মাঝামাঝিতে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এরপর প্রতিরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।মাদকবিরোধী অভিযানের দুই সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরাও। মাদকের উৎস বন্ধ না করে এভাবে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের’ মাধ্যমে মাদক নির্মূল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তারা।মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সারা দেশে যে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে তার যৌক্তিকতা আমরা অনুধাবন করি। দেশে খুব কম পরিবার আছে যারা মাদকের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছেন। তাই সঙ্গত কারণে সর্বস্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনও এই অভিযানে প্রত্যাশিত ছিল।তবে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড এই অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন। বিবৃতিদাতারা।মাগুরায় গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয় মঙ্গলবার রাতে, যারা মাদক কারবারি বলে পুলিশের দাবি। মাগুরায় গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয় মঙ্গলবার রাতে, যারা মাদক কারবারি বলে পুলিশের দাবিএর মধ্যে সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যু আতঙ্ক তৈরি করছে বলে মনে করছে তারা।বিবৃতিতে বলা হয়, টেকনাফে নিহত পৌর কমিশনার একরামের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার পূর্ব অভিযোগের কথা জানা যায়নি। তাকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পৌর মেয়র। তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাপূর্ব ফোনালাপ সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেছেন।এটা (ফোনালাপে যা উঠে এসেছে) কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে অকল্পনীয়। এ রকম একটি ঘটনাই সমগ্র অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ ও জনগণকে আতঙ্কিত করতে যথেষ্ট।যত দ্রুত সম্ভব ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সঠিক তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে ভয়ভীতি থেকে মানুষকে মুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।