কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।তিনি বলেছেন, কাদের সাহেবের এমন বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠাট্টা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। খুনি-সন্ত্রাসীদের মতো বেআইনি হত্যাকান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়াই তার বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য।

রোববার (০৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, এই ধরনের (মাদক বিরোধী) মহৎ অভিযানে দুই-একটা ভুল হতেই পারে।কী নির্দয় ঠাট্টা, কী রসিকতা! মানুষের জীবন নিয়ে ভুল! ওবায়দুল কাদের সাহেবের এমন বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠান্ডা করা, খুনী-সন্ত্রাসীদের ন্যায় বেআইনি হত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া।আগের দিন এক অনুষ্ঠানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ টেকনাফের পৌর কাউন্সিল একরামুল হক নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি তিনি নিরপরাধ হন, তাহলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। এই ধরনের অভিযানে দুই একটা ভুল হতেই পারে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ড্রাগ চেইনের লিংক হিসেবে চুরি চোট্টামি করা ছিঁচকে কিছু মানুষসহ প্রমাণহীন আরো অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযান চালানো হলেও চেইনের শীর্ষে বসে থাকা অমিত ক্ষমতাধর গডফাদাররা বসে আছে কী করে? মাদক সরবারহের উৎস পথ আটকে যাচ্ছে না কেন? কারা দেশের অভ্যন্তরে মাদক ঢুকতে সহায়তা করছে? রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কি উৎসমুখ খোলা থাকে?

কারণ এই উৎসমুখগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন বদিদের মতো এমপি; প্রশাসনের সহায়তায়। বদিসহ ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল জনগণ তা জানতে চায়। সরকারই গডফাদারদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করছে।একরাম হত্যার ঘটনার অডিও কথোপকথন প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, একরাম হত্যার অডিও শুনে, তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্না শুনে শুধু বাংলাদেশের মানুষের বিবেক নয়, বিশ্ববিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু একরাম হত্যাই নয়, এখন পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে প্রায় ১৩০ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।গত চার মাসে ২৫০ জন মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মানুষ হত্যার ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যার বেশির ভাই আবার তরুণ যুবক।বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেআইনি হত্যার জন্য গোটা সরকারই দায়ী। তাদের আশকারাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে চলছে দেশব্যাপী মানুষ হত্যার বিভিষীকা। এই মাদকবিরোধী অভিযানের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড।তিনি বলেন, জামিন আটকে রেখে খালেদা জিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধুমাত্র একজনেরই প্রতিহিংসার প্রতিফলন।আমি আবারো দাবি জানাই- দেশনেত্রীর জামিন নিয়ে কানামাছি খেলবেন না। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিন। অন্যথায় দেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে, তার জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার তারিকুল ইসলাম আরিফের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি জানান রিজভী।বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, হায়দার আলী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আনোয়ার হোসেইন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।