ভোলার মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও ইলিশ না থাকায় জেলে পল্লীতে হাহাকার দেখা দিয়েছে। জেলেরা ঘাটে ঘাটে বেঁধে রেখেছে মাছ ধরার ট্রলার-নৌকা। অনেক জেলে এনজিওর চড়া সুদে ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটছে তাদের। আবার কেউ কেউ পেশা বদলানোর চিন্তা ভাবনা করছেন। মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন মাছ ঘাট ঘুরে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভরা মৌসুমেও ইলিশ না থাকায় ঘাটে ঘাটে জালসহ নৌকা-ট্রলার বেঁধে রেখে মহাজনের দাদন ও এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলেরা।শশীগঞ্জ মাছ ঘাটের মফিজ মাঝি জানান, ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে আট জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে শনিবার নদী গিয়ে ছোট সাইজের ছয়টা ইলিশ মাছ পেয়েন, যা বিক্রি করে হাতে পেয়েছি ২ হাজার আটশত টাকা। অথচ প্রতিদিন নদীতে গেলে খরচ হয় পাঁচ-সাত হাজার টাকা। লোকসান হওয়ায় নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখেছেন তিনি।

মনপুরা কলাতলী মাছ ঘাটের জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাস থেকে মাছ পড়া শুরু হলেও এ বছর জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হতে চললেও ইলিশ মাছের দেখা মিলছে না। চার-পাঁচটি মাছ পেয়ে খরচ পোষে না। তাই তিনি চট্টগ্রাম গিয়ে অন্য কাজ করার কথা ভাবছেন। চৌমহনী মাছ ঘাটের জেলে সাইদ মাঝি জানান, দাদন ও এনজিওর ঋণ দুটোই তাদের জন্য কষ্টকর। কিন্তু দাদনের সুবিধা হলো যেদিন মাছ ধরা পরেনা সেদিন আড়ৎদারকে টাকা দিতে হয় না। অন্যদিকে এনজিওর কিস্তি এদিক সেদিক হলে ঘরের আসবাব পত্র নিয়ে টানা হেচড়া শুরু করে। এজন্য জেলেরা পালিয়ে বেড়ায়। আবার পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হয়।স্লুইজ ঘাটের মৎস্য আড়ৎদার সিরাজ মেম্বার জানান, গত বছর এই দিনে দৈনিক পঞ্চাশ লাখ টাকার মাছ বেচাকিনা হয়েছে এই ঘাটে, কিন্তু এবছর পাঁচ লাখ টাকার মাছও বেচাকিনা হয়না। যারা নদীতে মাছ ধরতে যায়, তারা পাঁচ-সাতটি করে ইলিশ মাছ পায়। তাই অনেক জেলে নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখেছে।

শশীগঞ্জ স্লুইজ ঘাট মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম জানান, তজুমদ্দিনে প্রায় ৩০০ আড়ৎদার ও ১৫০ জন বেপারীসহ মেঘনা উপকূলে কয়েক লক্ষ মৎস্যজীবি রয়েছে। নদীতে মাছ থাকলে সুদিন, না থাকলে আমাদের চরম দুর্দিন। মৎস্যজীবি ও মৎস্য সম্পদ টিকিয়ে রাখতে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন।এই রকম শুধু তজুমদ্দিন নয় ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী পাড়ের জেলেদের দুর্দিনে কাটছে। এব্যাপারে ভোলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এসময় নদীর পানি লবনাক্ত হওয়ায় ইলিশ মাছ কম পড়ছে। বৃষ্টির পরিমান ও ¯্রােত বাড়লে তার সাথে সাগর থেকে ইলিশ আসতে শুরু করবে। তখন জেলেদের জালে জাকে জাকে মাছ পড়তে শুরু করবে।