ঈদের আগে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে হাটহাজারী পৌরসভার রশিদ দিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। যানবাহন গুলোর চালকরা পরিবহন সংশ্লিষ্ট কোন সংগঠনকে নয়, চাঁদা দিতে হচ্ছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের। প্রকাশ্যে দিবালোকে তারা ওই মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় চাঁদা আদায় করছে। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গাড়ির মালিকসহ সাধারণ মানুষ। রাস্তায় গাড়ি বের করলেই চাঁদা দিতে হয় তাদেরকে। পরিবহন মালিক ও চালকেরা অভিযোগ করেছেন, মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় চাঁদা দিতে হচ্ছে সরকার দলীয় পলিটিক্যাল ক্যাডাররা। এ সময় চাঁদা দিতে অপারক হলে বেদড়ক পিটুনির শিকার হতে হচ্ছে পরিবহন মালিক ও চালককে।

মহাসড়কে ভূক্তভোগী পরিবহন চালকেরা আরো অভিযোগ করেন, ঈদ যত কাছে আসছে, চাঁদার অঙ্কের পরিমাণ তত বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজির টার্গেট নিয়েই মাঠে নেমেছে ছিঁচকে কিছু মাদকাসক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও পলিটিক্যাল ক্যাডাররা ব্যবহার করে মোটর সাইকেল দিয়ে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত রেখেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নাম করেও ফায়দা লুটছে এসব সন্ত্রাসীরা। একই সঙ্গে মহাসড়কে চাঁদা আদায়ের স্থান হিসেবে প্রতিদিনই নতুন এলাকার নাম যুক্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাটহাজারী পৌরসভার (সার্ভিস চার্জ/স্টপিজ ফি/স্ট্যান্ড ফি) রশিদ দিয়ে প্রতিদিন ৫-৭টি গ্র“প মোটর সাইকেল যোগে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার কলেজ গেইট, উপজেলার সম্মুখে, জাগৃতির মোড়, কাচারী সড়ক বাসস্টেশন, থানার সামনে, হাটহাজারী বাজার, মাদ্রাসার সামনে, রেল স্টেশন রোড ও হাতিনার দীঘির পাড় এলাকায় চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। চাঁদা আদায়ের সময় তারা প্রতিটি কাভার ভ্যান থেকে ১শ, বড় পিক-আপ/ছোট পিক-আপ থেকে ২শ এবং অন্যান্য যানবাহন থেকে গড়ে ৫০-১৫০শ টাকা হারে আদায় করে চলছে। এদের আদায়ের রশিদে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লেখা হয়েছে গাড়ি পাকিং করা মাত্রই টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে। তবে চাঁদা দিতে অপারক হলে পরিবহন মালিক ও চালকদের বেদড়ক পিটুনির শিকার হতে হচ্ছে। এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন নজরদারী এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সামনে মোনালিছা স্টোরে নিয়ে আসা ঈগলু আইসক্রিমের কাভার ভ্যান থেকে সরকার দলীয় এসব পলিটিক্যাল ক্যাডাররা হাটহাজারী পৌরসভার রশিদ দিয়ে চাঁদা দাবী করে। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানটির (মোনালিছা স্টোর) মালিক এস এম আজম উদ্দিন চাঁদা দিতে অপারক হলে তাকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করে চাঁদাবাজ পলিটিক্যাল ক্যাডাররা। বিষয়টির সত্যতার ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী প্রধান সহকারী মো. শাহাব উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, কাভার ভ্যান থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য পৌরসভা কতৃপক্ষ কাউকে দায়িত্ব বা লিজ দেওয়া হয়নি। শুধু মাত্র হাটহাজারী পৌরসভার ৫টি স্ট্যা-ে সিএনজি অটোরিকশা/টেক্সি/টেম্পু থেকে ৫ ও কার/মাইক্রো/হাইট/পিক-আপ থেকে ১০ থেকে খাস আদায় কাজে সহযোগীতরা করার জন্য পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ ও চেতনায় ৭১ নামে সরকার দলীয় একটি সংগঠনের হাটহাজারী পৌরসভার সভাপতি মো. জাবেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে বিষয়টি ব্যাপারে অবহিত নন বলে জানান হাটাহাজারী বিষয়টি হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আক্তার উননেছা শিউলি। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, হাটহাজারী পৌরসভার রশিদ ব্যবহার করে মহাসড়ক থেকে চাঁদাবাজির করার জন্য কাউকে ইজারা বা লিজ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি এবং ব্যবস্থা গ্রহন করছি।এ ব্যাপারে হাটহাজারী সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, চাঁদাবাজির কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।