ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিনে রাজধানীর কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় হয়েছে। পছন্দের টিকিট সংগ্রহ করতে ২৪ ঘণ্টা আগে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে দেয়া হচ্ছে ১৩ জুনের টিকিট এছাড়া মঙ্গলবার ১৪ এবং বুধবার ১৫ জুনের আগাম টিকিট দেয়া হবে।এদিকে, কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বন্ধ করতে পুরো স্টেশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সিসি টিভিতে নজর রাখা হয়েছে যাত্রীদের ওপর। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা।

এবার ঢাকা-কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনকে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-খুলনা রুটে ব্যবহার করা হচ্ছে। সোমবার থেকে ৬ জুন পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। ১৭৫টি অতিরিক্ত যাত্রীবাহী বগিসহ ১৮টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন এবারের ঈদে চালানো হবে।কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রুটি নেই। অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিট নিতে আসা যাত্রীদের একটা কথা মনে রাখতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সীমিত টিকিট বিক্রি করছে।ঈদের অগ্রিম টিকেট দেওয়ার চতুর্থ দিনে উপচেপড়া ভিড় হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে; পছন্দের টিকেট কেনার জন্য ২৪ ঘণ্টা আগে কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন যাত্রীদের অনেকে।দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও সাধারণ শ্রেণির টিকেট পাওয়া গেলেও প্রত্যাশিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেট না পেয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা।ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য রোববার সকাল ৮টায় কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন আবদুল হামিদ খান।তিনি বলেন, কাল সকালে আইসা বসেছিলাম। সারাদিন-সারারাত দাঁড়িয়ে থেকেছি কাউন্টারের সামনে। ২৪ ঘণ্টা পর কাউন্টারে গিয়ে এসি কেবিন, চেয়ার সিট চাইলাম। কিন্তু তারা বলে এসি কোনো টিকেটই নাই। শেষে শোভন চেয়ার টিকেট নিলাম।

রংপুর যাওয়ার ট্রেনের টিকেটের জন্য রোববার বেলা ১০টা থেকে লাইনে আছেন চাকুরীজীবী মাহবুব আলম। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় কাউন্টারে গিয়ে তিনি জানতে পারেন নীলসাগর এবং রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার কোনো টিকেট নাই।তারা কাউন্টার থেকে যে কথা বলে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। আমার আগে সাতজন কেট নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয়জন চারটা করে আটটা টিকেট কিনেছে। কিন্তু এরপর আর কেউ এসি টিকেট পায় নাই।রংপুরের আরেক যাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, বিক্রি শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে এসি টিকেট শেষ হয়ে যাওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ।তিনি বলেন, কাল সকাল ১০টায় এসেছি। আগেভাগে এসে এত কষ্ট করার কারণ একটু ভালো টিকেট পেলে স্বস্তিতে যাবে। কিন্তু চাইলাম এসি টিকেট, দিল শোভন চেয়ার। দেখেন, রংপুর এক্সপ্রেসে ১৩২টি এসি সিট আর লালমনি এক্সপ্রেসে এসি সিট আছে ৫০ টা। আমাদের আগে তা মাত্র ৮টা টিকেট দিল এসির!খুলনা রুটের চিত্রা এক্সপ্রেসে চুয়াডাঙা যাওয়ার টিকেট কিনেছেন এহসানুল কবির। সোমবার বেলা পৌনে ৯টায় তিনি বলেন, টিকেট কিনতে রোববার দুপুর আড়াইটায় কমলাপুরে এসেছেন তিনি।রাতে এখানেই পেপার বিছিয়ে ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া করেছি এখানেই। এখন টিকেট পেলাম। তবে আমি শোভন চেয়ার শ্রেণির টিকেট কিনেছি সোমবার কমলাপুর থেকে ২৭ হাজার ৪৬১টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এসব টিকেটের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার সংখ্যা জানতে চাইলেও দিতে পারেননি কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী।তিনি বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেটে চাহিদা বেশি। সেগুলো কাউন্টার থেকেই বিক্রি হয়েছে।এটা পুরো বলা যাবে না কোন ট্রেনে কতটা এসি সিট আছে। কোনটাতে একটা কোচ (এসি) লাগানো আছে, কোনটাতে দুইটা কোচ। বিভিন্ন ট্রেনের বিভিন্ন সংখ্যা আছে, যা আমাদের কাউন্টারে ওপেন করা আছে। খুলনা স্পেশাল একটা ট্রেন আছে যার পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার বেশিরভাগ টিকেট ভিআইপিদের জন্য রেখে দেওয়া হয় বলে জানান রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা।নামপ্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আপার ক্লাসের টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। মন্ত্রী, এমপি, সচিব এবং বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিক সবাই চায়। এটা এডজাস্ট করতে গিয়ে কাউন্টারে বেশি টিকেট দেওয়া যায় না। এ কারণে এইটা নিয়া সবসময়ই ঝামেলা হয়।তবে খুলনা এবং চট্টগ্রামের আপার ক্লাসের টিকেট নিয়া কিন্তু এত ঝামেলা নাই। ওইদিকে মোটামুটি অনেকেই এসি টিকেট পায়। রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটে এসি টিকেটের ক্রাইসিস বেশি থাকে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেটের চাহিদা বেশি, কিন্তু কোচ কম।কাউন্টারে এসি টিকেট কম দেওয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিআইপিদের জন্য কোটা আছে। এটা তো আর অ্যাভয়েড করা যাবে না। বিচারপতি মহোদয়রা যাবেন, এমপি মহোদয়রা যাবেন। উনাদের জন্য তো এসি রাখতে হয়।এছাড়া মোবাইলে, এসএমএসে টিকেট দিতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় ভাগ হয়ে যায়। এজন্য কাউন্টারে কম যায়। টিকেট তো আসলে যাত্রীদের জন্যই। আমাদের তো আর টিকেটের দরকার নাই।সোমবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনের ২৬টি কাউন্টারে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট দেওয়া শুরু হয়। সোমবার বিক্রি হচ্ছে ১৩ জুনের ঈদযাত্রার টিকেট।অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথম তিনদিন প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনের ২৩ হাজার ৫১৪টি টিকেট দেওয়া হচ্ছিল। তবে ১৩ তারিখ থেকে ঈদের বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হবে। সেজন্য সোমবার এসব ট্রেনের ৩ হাজার ৯৪৭টি অতিরিক্ত টিকেটও কাউন্টার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে।

সোমবার কমলাপুরের সবগুলো কাউন্টারে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। টিকেট বিক্রির প্রথম তিন দিন পুর্বাঞ্চলের ট্রেনের কাউন্টারগুলোর সামনে টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় তেমন না থাকলেও সোমবার সবগুলো কাউন্টারের সামনেই দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন।চট্টগ্রাম যাওয়ার সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য রোববার সকাল ১০টায় স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন শফিকুল ইসলাম। সোমবার বেলা পৌনে ৯টার দিকে প্রত্যাশিত টিকেট পেলেন তিনি।আমাদের ওই লাইনে এখন জ্যাম হয়। আর এবার ঈদের আগে থেকেই তো অনেক জায়গায় জ্যাম লেগে আছে। এজন্য রাত জেগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে হলেও ট্রেনেই যাওয়ার চেষ্টা করি।সোমবার বেলা সকাল থেকে নারীদের কাউন্টারে ছিল অনেক ভিড়। তবে একটা কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়ায় নারীদের লাইনটিই সবচেয়ে দীর্ঘ হয়ে যায়। গত তিনদিন নারীদের জন্য দুটি কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করেছিল রেলওয়ে।একটি কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়ায় ভোগান্তি হচ্ছে অভিযোগ করেন তৈরি পোষাক কারখানার কর্মকর্তা তনু। রোববার রাত ১০টা থেকে ছোটবোন মিতুকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।আমাদের এই লাইনটা অনেক বড়। খুব ধীরে এগুচ্ছে। গত রাত থেকে দাঁড়িয়ে আছি টিকেটের জন্য। আমরা সামনের সারিতে আছি। আশা করি প্রত্যাশিত টিকেট পাব।