দশম জাতীয় সংসদের ২১তম বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান সংসদের সর্বশেষ এ বাজেট অধিবেশন আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে। আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে আজ মঙ্গলবার সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়।

অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার সকল সংসদ সদস্যসহ দেশবাসীকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাজেটেরে ওপর সংসদ সদস্যদের অর্থবহ আলোচনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাজেট অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ। সংসদ সদস্যরা সরকারি আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুচিন্তিত মতামত দিয়ে বাজেটকে আরো বাস্তবমুখী করার ওপর আলোচনা করবেন।’ অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে অধিবেশন পরিচালনার জন্য ৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলী নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন- আবুল কালাম আজাদ, শামসুল হক টুকু, মো. মাহবুব আলী, মো. ফখরুল ইমাম ও সাফুরা বেগম।

পরে বর্তমান সংসদ সদস্য মাঈদুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমসহ অন্যান্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। শোক প্রস্তাবের উপর সাধারণ আলোচনার পর মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। সর্বশেষ শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে অধিবেশন মুলতবি করা হয়। শোক প্রস্তাবের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ রাজনীতিতে মাঈদুল ইসলামের অনন্য অবদান রেখেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘ তিনি শুধু অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান নন, একজন গুণী মানুষও ছিলেন। সাধারণ জনগণ ও এলাকার উন্নয়ন ছিল তার আজীবনের স্বপ্ন। আমৃত্যু তিনি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছেন।’ এজন্য মাঈদুল ইসলাম অনেক আগেই দানবীর হিসেবে পরিচিত পান বলেও দাবি রওশন এরশাদ।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান, জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ, আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আলী আশরাফ এবং জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, কাজী ফিরোজ রশীদ, নূরুল ইসলাম ওমর, নূর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী ও রওশন আরা মান্নান।
এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশন ১২ জুলাই পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ঈদের কারণে ১৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোজার সময়ে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে অধিবেশন বসবে। রমজানের পর প্রতিদিন বিকাল ৩টায় অধিবেশন শুরু হবে।
কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা ৪০ ঘণ্টা সাধারণ আলোচনা করবেন। আলোচনা শেষে ২৮ জুন বৃহস্পতিবার নতুন অর্থ বছরের বাজেট পাস হবে।

বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সাবেক রাষ্ট্র্রপতি এই এম এরশাদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মইন উদ্দীন খান বাদল ও প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এদিকে বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়। সকাল থেকেই চারপাশে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক র্যা ব ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে জলকামান থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখে প্রশাসন। এমনকি সংসদ ভবনে প্রবেশ নিয়েও ছিল কঠোর কড়াকড়ি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়াই এই সংসদ যাত্রা শুরু করে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিগত বছরগুলোর মতো শেষ বছরের বাজেট অধিবেশনেও তাদের সবর উপস্থিতি দেখা গেছে। গত ১২ এপ্রিল শেষ হওয়া সংসদের ২০তম অধিবেশনেও বিরোধীদলীয় সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।

সংসদের গণ-সংযোগ শাখার পরিচালক মো. তারিক মাহমুদ জানান, ১০ ও ১১ জুন সম্পূরক বাজেট আলোচনার পর পাস করা হবে। এছাড়া ২৭ জুন অর্থবিল এবং ২৮ জুন বাজেট পাস করা হবে। এর আগে সাধারণ বাজেটের ওপর মোট ৪০ ঘণ্টা আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য চারটি সরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে।
এছাড়া সংসদে পাসের অপেক্ষায় চারটি, কমিটিতে পরীক্ষাধীন সাতটি ও উত্থাপনের অপেক্ষায় দুটিসহ অনিষ্পন্ন মোট ১৭টি সরকারি বিল এবং অনিষ্পন্ন নয়টি বেসরকারি বিল এ অধিবেশনে রয়েছে। এ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য কোন বেসরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৭১টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব ও ৪২টি মনোযোগ আকষর্ণের এবং একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনার নোটিশ পাওয়া গেছে। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ ও সম্প্রতি সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রী অর্জন করায় কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। এ সময় সিনিয়র সচিব ড. মো. আবদুর রব হাওলাদারসহ সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।