নতুন অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতই থাকছে। যাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তিনি এই প্রস্তাব রাখেন।২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল।

ওই হার বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নারী করদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির করদাতাদের জন্য এ সীমা কিছুটা বেশি ছিল।করমুক্ত আয়ের সীমা কী হবে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে উন্নত দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা সাধারণভাবে মাথাপিছু আয়ের ২৫ শতাংশের নীচে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা সাধারণত মাথাপিছু আয়ের সমান বা তার কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা মাথাপিছু আয়ের প্রায় দ্বিগুণের মত।অর্থাৎ, আমাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের তুলনায় অনেক বেশি। করমুক্ত আয়ের সীমা বেশি হলে কর প্রদানে সক্ষম বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি করজালের বাইরে থেকে যান। এতে করের ভিত্তি দুর্বল থাকে।মুহিত বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় আমি আগামী বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ও করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি।তবে কোনো ব্যক্তি-করদাতার প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য তার করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা করে বাড়ানোর সুপারিশ করেন মুহিত।

অর্থাৎ, কোনো করদাতার একজন প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে তার করমুক্ত আয়সীমা হবে তিন লাখ টাকা। এদিকে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে তবে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয় কমিয়ে ৩.৯১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটে যা ছিল ৪.০৪ শতাংশ।অবশ্য বাজেট প্রস্তাবনায় ৯ হাজার ৭৯২ চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ১৮ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরে যেটি ছিল ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে ১৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্য ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।তিনি বলেন, ৯ হাজার ৭৯২ চিকিৎসক, চার হাজার নার্স ও ৬০০ ধাত্রী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে প্রতিটি বিভাগে পালাক্রমে একটি করে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ প্রত্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।প্রথমেই অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশ করেন। এর পর তিনি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়।আজকের এই বাজেট বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১২তম বাজেট। এর মধ্য দিয়ে টানা দশমবার বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তাবিত এ বাজেটে সরকার কোনো ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছে না। তাই অন্যবারের মতো নতুন নতুন কর চাপিয়ে ভোটারদের অসন্তুষ্ট করার মতো তেমন কোনো ঘোষণা এবার থাকছে না।