কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে হাটহাজারীতে আলিফ হসপিটাল নামে একটি বেসরকারী হাসপাতালে এক সদ্য নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।শনিবার (৯ জুন) ভোরে হাটহাজারী পৌরসভার বাসস্টেশনস্থ ওই হাসপাতালে নবজাতটির মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করে নবজাতকের পিতা হাটহাজারী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগকারী হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহকারী প্রক্টর ও ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শহিদুল আলম শাহীন। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎ সময়ে ও রাউজান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জেবুনেসা কেয়াকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

থানায় অভিযোগকারী শহিদুল আলম শাহীন জানান, গত শুক্রবার (৮ জুন) বিকালে আমার স্ত্রী কহিনুর আকতারকে পৌরসভার বাসস্টেশনস্থ আলিফ হসপিটালে হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ডা. হাছিনা আক্তারের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করেছি। রাত সাড়ে দশটার দিকে তার (স্ত্রী) প্রসব বেদনা শুরু হয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই নার্স (সেবিকা) দিয়েই নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। এতে একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হলেও কর্তব্যরত ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভোর সাড়ে ৫টায় নবজাতকটি মারা যায়। তাই আমি আলিফ হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাছিনা আক্তার ও ডা. জেবুনেসা কেয়ার বিরুদ্ধে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

এ ব্যাপারে অভিযোগযুক্ত আলিফ হসপিটালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কেয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, প্রসুতি কহিনুর আকতার ডা. হাছিনা আক্তার ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়েছিল। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিল। রাত ৯টার পর থেকে ওই প্রসুতি আমার তত্ত্বাবধানে থাকলেও আমি হাছিনা ম্যাডামের পরামর্শ অনুয়ারী প্রসুতিকে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রসুতি সার্বক্ষনিক আমার পর্যবেক্ষণে ছিল যা সিটি টিভি ফুটেজে ধারণ করা আছে। প্রসুতির শারীরিক অবস্থা ভালো থাকায় এবং তার (প্রসুতি) পরিবারের ইচ্ছায় নরমাল ডেলিভারি করার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। প্রসুতি তথা নবজাতকের সবকিছু ঠিক থাকায় সিজারের কোন প্রয়োজন হয়নি বলে হাছিনা ম্যাডামকে আর আসতে হয়নি। রাতের শেষ ভাগে ভোর রাতে প্রসুতির নরমাল ডেলিভারি হয় এবং একটি কণ্যা সন্তান প্রসব করে। তবে জন্মের পরপরই নবজাতকটি কোন সাড়া পায়নি এমনকি কান্নাও করেনি। সর্বাত্মক সব চেষ্টা করেছি তবে নবজাতকের চিকিৎসায় কোন অবহেলা হয়নি। হয়তো জন্মগত কোন ত্রুটি বা কার্ডিয়াক ডিজিজের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সোহরাওয়ার্দী হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ এবং সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) লিটন মিত্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। । আলিফ হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন জানান, নবজাতকটি মৃত্যুর কারণ প্রশাসন তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে ডা. কেয়াকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে হাটহাজারী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহির উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নবজাতকের লাশ পরিবারকে হস্তান্তর করে। আগামী মঙ্গলবার (১২মে) রাত ১০টায় বিষয়টি সুরাহা করতে থানায় উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন। তবে নবজাতকের মৃত্যুর ব্যাপারে তাদের কাছে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

এদিকে উক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী বিভিন্ন রোগীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ আছেই। বিগত কয়েকমাস পূর্বে অপর এক রোগীর ডেলিভারীর সময় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আসছে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ এ ধরণের ঘটনার জন্য হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জনশ্রতি রয়েছে।