প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য জি-৭ দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।রোববার শেখ হাসিনা জি-৭-এর আউটরিচ বৈঠকে বিশ্ব মহাসাগর বিষয়াবলি শীর্ষক এক ইন্টারভেনশনে বলেন, সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, নীল জল আমাদের জনগণের কাছে একটি ‘ঐতিহ্য’। সময়ের দাবি অনুযায়ী আমরা আমাদের উপসাগরকে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্র“তিবদ্ধ।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি বর্জ্য নিক্ষেপ এবং সাগরের জল অম্লীয় হয়ে যাওয়াসহ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ৭৫টি উপকূলীয় দ্বীপ ডুবে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে এবং নদীগুলোতে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি লোকের বাস্তুভিটা স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের জীবিকার সুযোগ সীমিত এবং মহাসাগরীয় চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা খুবই সীমিত।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বত্র শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জনগণের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে সামুদ্রিক নীতি গ্রহণ করেছি।প্রধানমন্ত্রী জি-৭ভুক্ত সব দেশকে সমুদ্রভিত্তিক পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মান এবং সুবিধার অংশীদারিত্বের নীতির ভিত্তিতে এবং তাদের উদ্ভাবন ও সক্ষমতাকে সমুদ্রসম্পদের টেকসই উন্নয়নের সুরক্ষা প্রদান, সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

অভিযোজিত প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং মূল প্রযুক্তি হস্তান্তরকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তির দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্লাস্টিকের পরিবর্তে শিল্পে পাটজাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব এ ক্ষেত্রে স্বল্প ব্যয়ে পচনশীল জৈব প্রযুক্তিকে বিকল্প হিসেবে দেখতে পারে।জলবায়ুবিষয়ক ইন্টারভেনশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনে সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জলবায়ু অর্থ সংস্থানের উন্নয়নে যুক্ত করা এবং সহায়তা বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং স্থানান্তর প্রভৃতি খাতে সহায়তা প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দরিদ্র ও সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সমর্থনের জন্য কানাডীয় সরকারের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য কানাডা আগামী পাঁচ বছরে ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে। আর গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য দেবে (জিসিএফ) ৩০০ মিলিয়ন ডলার।বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর কাছে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উভয় ধরনের সহযোগিতারই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।