বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হবে।সোমবার কারা অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া রাজি থাকলে কাল মঙ্গলবার তাঁকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হবে।
গত শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক কারাগারে তাঁকে দেখে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা বলেন, তাঁরা ধারণা করছেন খালেদা জিয়া মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন। চিকিৎসকেরা জানান, ৫ জুন খালেদা জিয়া কারাগারে হঠাৎ পড়ে যান। তাঁরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার সুপারিশ করেন।সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ ইফতেখার বলেন, আমরা ওনাকে (খালেদা জিয়া) কাল সকালে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাব। তবে উনি যদি রাজি থাকেন। ওনার রাজি হওয়ারও বিষয় আছে। তিনি ইউনাইটেডে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে বলেন, কারা বিধি অনুযায়ী বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ নেই।আইজি প্রিজন্স বলেন, সরকার চাইলে বেসরকারি হাসপাতালে কারও চিকিৎসায় অনুমোদন দিতে পারে। তবে চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে, কীভাবে করবে, তা ঠিক করতে হবে।

বিএসএমএমইউ সম্পর্কে সৈয়দ ইফতেখার বলেন, বিএসএমএমইউ চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সর্বোচ্চ সরকারি প্রতিষ্ঠান। যদি সেখানে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকে, তাহলে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার প্রশ্ন আসে। খালেদার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হওয়ার খবর প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন পুরোপুরি অজ্ঞান হননি।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর গত ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে রয়েছেন।বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনার মধ্যে সোমবার প্রথম কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার গত ৫ জুন কারাগারে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ হলে বিএনপি তাদের নেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি পুনরায় তোলে।গত শনিবার খালেদার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক কারাগারে তাকে দেখে এসেও একই সুপারিশ করেন।এর পরদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রোববারই বিএসএমএমইউতে নেওয়া হবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে।কিন্তু পরে আর নেওয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পরে সাংবাদিকদের বলেন, এই বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে। সৈয়দ ইফতেখার বলেন, আমরা উনাকে আগামীকাল সকালে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাব। বিএসএমএমইউ তৈরি রাখতে বলেছি। তবে উনি যদি রাজি থাকেন। উনার রাজি হওয়ার একটা বিষয় আছে।বিএসএমএমইউতে খালেদার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেই বলে বিএনপি দাবি করলেও কারা বিধিতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক।

কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জেল কোড অনুযায়ী সরকারি অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ নেই।খালেদার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হওয়ার যে ধারণার খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দিয়েছিলেন, দৃশ্যত তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন কারা মহাপরিদর্শক।তিনি বলেন, উনি পুরোপুরি অজ্ঞান হননি। কিছুটা ইমব্যালেন্সড হয়েছিলেন। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসাও করা হয়েছে।খালেদা জিয়া জিয়া ট্রাস্ট মামলাটিতে আপিল করে জামিন পেলেও অন্য মামলায় জামিন না হওয়ায় ঈদ তাকে কারাগারেই করতে হচ্ছে।কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার জানান, ঈদের দিন বিশেষ খাবার পাবেন খালেদা জিয়া। এছাড়া তার স্বজনরা দেখা এবং বাড়ি থেকে খাবার নিয়েও আসতে পারবেন। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর চার মাস ধরে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন তিনি। দেখভালের জন্য কারাগারে ব্যক্তিগত গৃহকর্মীও পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।এর আগে আরেকবার অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক্স করানোর জন্য গত এপ্রিলে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়েছিল।