বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আওয়ামীলীগ সরকার দেশে নুন্যতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় না। কারণ তারা মনে করে এ সুযোগ যদি একবার জনগনকে দেয়া হয় তারা আওয়ামীলীগকে প্রত্যাখান করবে। এ অবস্থা যদি হয় তাহলে তাঁর এলাকার মানুষ আগামীতে আওয়ামীলীগকে ভোট দেবে না।

গত ৫ বছর আমরা কোন ঘরোয়া বৈঠক করতে পারিনি। বর্তমান সরকারের মহা ক্ষমতাধর এক নেতার (ওবায়দুল কাদের) সুবাধে এলাকায় গিয়ে সভা করা তো দূরের কথা, কোন স্কুল, মাদ্রাসা বা ঘরোয়া পরিবেশে ঘরোয়া বৈঠক করতেও দিচ্ছে না। রমজান মাস উপলক্ষে আমি নির্বাচনী এলাকায় ইফতার মাহফিল করতে এসেছি এবং মত বিনিময় সভা করার জন্য। রোববার রামপুর ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল করার আয়োজন করা হয়েছিল। ইফতার মাহফিলের জন্য স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সামিয়ানা টাঁনিয়েছিল। সকাল বেলা পুলিশ গিয়ে সে সামিয়ানাটা ভেঙ্গে দিয়েছে। শনিবার রাতে পুলিশ ইফতার মাহফিলের জন্য তৈরী করা চুলার মধ্যে পানি ঢেলে দিয়েছে। সোমবার সকালে কদমতলা বাজারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে একটি স্কুল ঘরে তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু রোববার রাত ১২টায় কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আমার ব্যাক্তিগত সহকারীকে মুঠোফোনে বলে দেয়, আমি বাড়ী থেকে বের হয়ে কোথায়ও কোন অনুষ্ঠান যেন না করি। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি বলে দিয়েছেন, আপনি বাড়ীতে অনুষ্ঠান করতে পারবেন কিন্তু বাহিরে কোন অনুষ্ঠান করতে পারবেন না। অচ সোমবার সকাল বেলা দেখি আমার বাড়ীর ভেতরে ও সামনে পুলিশ পাহারা রয়েছে। কোন নেতাকর্মীকে বাড়ীতে আসতে দিচ্ছে না।

সোমবার (১১জুন) দুুপুর ১টার দিকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে তাঁর নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ-কবিরাহাটে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নেতা-কর্মীদের সাথে ইফতার ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পুলিশী বাধা দেয়া নিয়ে তাঁর নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী আবদুল হাই সেলিম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শিকদার, বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিপন, যুবদলের সভাপতি আবদুল মতিন লিটন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, পৌর যুবদলের সভাপতি শওকত হোসেন ছগির, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল কবির ফয়সল, সাধারণ সম্পাদক জাহেদুর রহমান রাজন, পৌরসভা ছাত্রদলের সভাপতি ওবায়দল হক রাফেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল হক আরিফ, কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা চৌধুরী লিটন, পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন খোকন, ছাত্রদল নেতা নাজমুল হোসেন সেলিম, কামাল উদ্দিন রুবেল প্রমূখ।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের যে এমন বেহাল অবস্থা তা আমি তো জানতাম না, তাদের জনপ্রিয়তা তো নেই, তারা সম্পূর্ণ ভাবে এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে। তা না হলে এরকম আচরণ করার তো কথা নয়। যদি তাদের সামান্যতম জনপ্রিয়তা থাকতো তাহলে তারা এগুলো করতো না। আওয়ামী লীগ জনগণকে, সুষ্ঠ নির্বাচনকে ভয় পায়। এ সব কারণে আওয়ামী লীগ এধরনের আচরণ করছে। আজকে দেশে যে সার্বিক অবস্থা এটা তারই প্রতিফলন ঘটায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকায় অগণতান্ত্রীক আচরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় আরো বেশি ঘটছে। এটা আরো বেশি খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। ওবায়দুল কাদেররের কাছে মানুষ এটা আশা করে না এবং আমি নিজেও কখনো এটা আশা করিনি। আমি তাকে খুব ¯েœহ করতাম। ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আমি খুব খুশি হয়েছি, আমাদের এলাকা থেকে একজন লোক সাধারণ সম্পাদক হয়েছে, আওয়ামী লীগের মত একটি রাজনৈতিক দলের। কিন্তু পদ পেলে যে মানুষ বড় হয় তা না, পদ পেয়ে তিনি যে আচরণ করছেন এবং যার প্রতিফলন সারা বাংলাদেশে ঘটছে। দেশে নুন্যতম কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। এ সরকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় না এবং করতে দিতে চায় না। কারণ তারা জানে এ সুযোগ যদি একবার জনগণকে দেয়া হয়, জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখান করবে। এ কারনে আজকে তারা ভীত এবং তারা তাদের কর্মকান্ড নিয়ে সংকিত। তারা বুঝে ফেলেছে, দেশের সাধারণ মানুষ তাদেরকে আর সমর্থন করে না। আমি আরো ৪-৫দিন আমার নির্বাচনী এলাকায় থাকবো। আমি বাহিরে কোথাও কোন সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করতে পারবো না। আমি বাড়ীর মধ্যে থাকতে হবে। আমাকে বাড়ী থেকে বের হতে দেবেনা। কোন নেতাকর্মীর সাথে দেখা করতে পারবো না। আমার সাথে কেউ দেখাও করতে পারবে না। পুলিশ আমার সাথে কাউকে দেখা করতে দেবে না। আমি একবারেই নিশ্চিত হয়ে গেছি এ এলাকার মানুষ আগামীতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না এবং তারা বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হবে। পুলিশ বলেছে আমি না আসলে নেতাকর্মীরা চাইলে ইফতার মাহফিল করতে পারবে। আমি থাকলে ইফতার মাহফিল, সভা-সমাবেশ করতে দেবে না।
আজকে দেশে এ দূর্যোগময় মূহুর্তে¡ আশা করি আমরা এর উত্তোরণ ঘটাতে পারবো এবং একটি সময় আসবে যে সময়ে বর্তমান সময় আর থাকবে না। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবেই। আজকে যে পুলিশ আমাদেরকে বাধা দিচ্ছে, পুলিশকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পুলিশেই তখন আওয়ামী লীগের এ ধরনের আদেশ পালন করতে আর রাজি হবে না। পুলিশ যখন দেখবে জনগণের জোয়ার অন্যদিকে রয়েছে। যখন সময় আসবে দেশের মানুষ মাঠে নামবে, সরকারের বর্তমান যে দমননীতি তার অবসান ঘটবে। বাংলাদেশের মানুষ আবার ভোটের অধিকার ফিরে পাবে এবং দেশের বিচার ব্যবস্থা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পাবে। দেশের সুষ্ঠ একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি আনতে পারবো। গণতান্ত্রিক চর্চা হবে সেটা একমাত্র সম্ভবপর আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বে সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মওদুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। দুই দিন পেরিয়ে গেলে তাঁকে এখনো চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়নি। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে সরকার ছলচাতুরী করছে। বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ এবং তার শারীরিক অবস্থা নিয়েও নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এমনকি অ্যাটনি জেনারেল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। কেউ বলেছে রোজা রাখার কারনে শারীরিক অবস্থা অবনতি ঘটেছে, কেউ বলেছে সুগারলেস হওয়াতে অসুস্থ হয়েছে। কিন্তু ফ্যাক্ট হচ্ছে তার অবস্থা ভালো নয়। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সর্ববৃৃহত রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন। তাকে একটি মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট মামলায় আটক রেখে কারাবরণ করতে হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা এমন একটি অমানবিক অবস্থায় আছে যা কোন অবস্থাতে কাম্য হতে পারে না। তিনি শংকা করে বলেন যে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটছে। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বেসিক কতগুলো পরীক্ষা করার দরকার তা এখনও করা হয়নি। দুইদিন আগে স্ট্রোক করার পরও এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে উপযুক্ত কোন হাসপাতালে নেয়া হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার যদি কোন অঘটন ঘটে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে বলে তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সরকারের এ অবহেলা মেনে নেবেনা। তার এ সংকট অবস্থায় শরীরের কিছু হলে দায়দায়িত্ব এ সরকারের উপর পড়বে। এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ তা মেনে নেবে না।

আমার ৪৫ বছর রাজনৈতিক জীবনে এ প্রথম নিজ গ্রামের বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন করছি। সকাল থেকে আমার বাড়ীতে পুলিশ প্রহরা ছিল। বাড়ীর সামনে, পেছনে, রাস্তায় পুলিশ ঘিরে রেখেছে যাতে করে আমার বাড়ীতে কোন নেতাকর্মী আসতে না পারে। এ জন্য আমি সংবাদ সম্মেলন করছি দেশে গণতন্ত্রের কি ধরনের পরিবেশ বিরাজ করছে, তা দেশের মানুষ জানুক। আওয়ামী লীগ একটি বিরাট রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকা কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট। তার এলাকায় কি ধরনের গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে, মানুষের মৌলিক অধিকার কতটুকু আছে, এটা দেশবাসী জানার প্রয়োজন। ওবায়দুল কাদের একজন উচ্চস্থানের মানুষ, তার কাছে মানুষ উদারতা প্রত্যাশা করে কিন্তু তার এলাকায় যে অবস্থা বিরাজ করছে সেটা দেশবাসী যদি জানে তাহলে মানুষ বুঝতে পারবে এখানে কি অবস্থা চলছে।