শিশুদের অধিকার সুরক্ষা ও শিশুশ্রম প্রতিরোধ এবং ব্যপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা, শিশুদের কাজের পাশাপাশি শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, অভিভাবকদের ও শিশুদেরকে শিশু শ্রমের কুফল সম্পর্কে জানানোর লক্ষ্যে একটি মানববন্ধন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এর উদ্যোগে আজ (১১ জুন) সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আগামী ১২ জুন বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে এ মানবন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে,  উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের(বিএলএফ) এর জেনারেল ম্যানেজার, এ.এইচ.এম মোর্শেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন এ ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মুক্তা বেগম, বিএলএফ এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসন, এডমিন অফিসার ইমরান হোসেনসহ আরোও অনেকে।
সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, দারিদ্রতা শিশু শ্রমের মূল কারণ কিন্তু এটা আমাদের সামাজিক ও কাঠামোগত সমস্যাও বটে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শিশু শ্রম বন্ধের আইন ও নীতিমালা থাকলেও তা শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এটি পুরোপুরি অকার্যকর। শিশুশ্রম বন্ধে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োাগ খুবই জরুরী। কেরানীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন বলেন, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ তাই খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থানসহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ করে শিশুদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গতে তোলা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

শিশু অধিকার সুরক্ষা ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবছর দিবসটি পালন করে। বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি শিশু নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়। ‘জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ-২০১৩’ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোন না কোন শ্রমে নিয়োজিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, এর মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। শিশু শ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমজীবী শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা থেকে সাধারণ শ্রমে নিযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

শিশুশ্রম বন্ধে বাংলাদেশে কাজ করছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ), ইউনিসেফ, সেফ দি চিলড্রেন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পরিবারে মা-বাবা বাধ্য হয়ে শিশুকে বিভিন্ন কাজে পাঠাচ্ছেন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর লোভী মালিক খুব অল্প পারিশ্রমিকে শিশুদেরকে বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ কাজে নিযোজিত করছে, যা খুবই ভয়ঙ্কর ও অমানবিক। শিশু শ্রম নিরসণে সরকারী, বেসরকারী এবং সুশীল সমাজ বিভিন্ন কর্মসূচীর গ্রহণ করতে পারে।

শিশু শ্রম নিরসনে আশু করনীয়
১. শিশু হয়রানী ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
২. শিশুর সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে শিশু অধিকার নিশ্চত করতে হবে।
৪. জাতীয় বাজেটে শিশুদের জন্য পৃথক বরাদ্ধ থাকতে হবে।
৫. শিশুর মানবাধিকার রক্ষা করা এবং শিশুর সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৬. শিশুশ্রমের উপর আইএলও কনভেনশন সার্বজনীন ভাবে কার্যকর ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. শিশুশ্রম বন্ধ করতে জাতীয় নীতিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
৮. শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
৯. দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা এবং শিক্ষা কর্মসূচী (পরিকল্পনা কৌশল) বাস্তবায়ন করতঃ সকল প্রকার শিশু শ্রম নিরসন করতে হবে।
১০. পথ শিশু, ছিন্নমূল শিশু, শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনে/কল্যাণে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্ধ করা।