লাইলাতুল কদরের রাতটি হাজার মাস থেকে উত্তম- কল্যাণময় (কুরআন)। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে (কুরআন)। এ রাতে ফেরেশতা নাজিল হয় এবং বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেণ করেন। এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দোয়া করেন (হাদিস)। লাইলাতুল কদরের ফজিলতগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ

এ রাতটি হাজার মাস হতে উত্তম- কল্যাণময় (কুরআন)
এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে। (কুরআন)
এ রাতে ফেরেস্তা অবতরন করে এবং বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। (হাদীস)
এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দু’আ করেন। (হাদীস)গুনাহ মাফঃ ‘‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর নিকট হতে বড় শুভ ফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পিছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’’-(বুখারী-মুসলীম)
এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম কল্যাণময়।’ সূরা আল্ কদর (১-৩)। এ রাতটি কোন মাসে? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান এমন মাস, যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে।’ (বাকারা-১৮৫)।

লাইলাতুল কদরে আমাদের করনীয়ঃ
কুরআন অধ্যয়ন করা: এ রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে। মানব জাতির এ বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এ কুরআনকে ধারণ করলেই মানুষ সম্মানিত হবে, একটি দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে,গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে। কুরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে।

নফল নামায পড়াঃ ন্যূনতম ১২ রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এজন্য সাধারণ সুন্নাতের নিয়মে ‘দু’রাকাত নফল পড়ছি’ এ নিয়তে নামায শুরু করে শেষ করতে হবে। এ জন্য সুরা ফাতেহার সাথে আপনার জানা যে কোন সূরা মিলাইলেই চলবে। বাজারে প্রচলিত কিছু বইতে ৩৩ বার সূরা আল কদর, ৩৩বার ইখলাস ইত্যাদি উল্লে­খ করে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। হযরত আশ্রাফ আলী থানবী (রঃ), মাওলানা ইউসুফ ইসলাহী (রঃ) এবং এ পর্যায়ের বরেণ্য ফকিহরা এগুলো জরুরী মনে করেন না। বরং ঐ সংখ্যকবার সূরা পড়তে গেলে হিসাব মিলাতে নামাজের একাগ্রতা নষ্ট হবার সম্ভাবনাই বেশী থাকে।

জিকির : হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বার বার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (মা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে। হজরত আয়েশা রা: বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে কী দোয়া করব? জবাবে নবী সা: বলেন, এ দোয়া পড়বে‘ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ আল্লাহ তুমি মাফ করনেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাদের গুনাহগুলো মা করে দাও।

মুনাজাত : মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দার বন্দেগি ও আল্লাহর রবুবিয়াতের প্রকাশ ঘটে। বান্দাহ তার প্রভুর কাছে চায়। প্রভু এতে ভীষণ খুশি হন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তাঁর কাছে না চাইলে অসন্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন।’ (তিরমিজি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল’- (আল-হাদিস)। ‘যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিজি)। কাজেই আমরা কায়েমনোবাক্যে আল্লাহর দারবারে মুনাজাত করব, মা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব। মনের আবেগ নিয়ে চাইব। চোখের পানি ফেলে চাইব।

লাইলাতুল কদরের বিশেষ দুয়া: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বল:

“হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অত:এব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”
এই রাতে কোরআন তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। পবিত্র এই রাতেই মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ জন্য কোরআনের সঙ্গে এই রাতের সম্পর্ক ওতপ্রোত।

উপরিউক্ত আমলের মাধ্যমে আমরা এ পবিত্র রাতগুলো কাটাতে পারি।