বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় সমুদ্র বন্দরগুলোতে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। একই সঙ্গে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোনো কোনো স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। বুধবার (১৩ জুন) সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আকাশ মেঘলা রয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে রাজধানীবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ ২২৭ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে ফেনীতে, কুলল্লায় ১২২ মি.মি. সীতাকুন্ডে ১০৫ মি.মি. এবং টেকনাফে ১০১ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালের খেপুপাড়ায় ১২৫ মি.মি., বরিশালে ৫ মি.মি., সিলেটে ১০২ মি.মি., ঢাকায় ৫৮ মি.মি. ও খুলনায় ১৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। অন্য দিকে, দেশের সর্বোচ্চ যশোরে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বুধবার।সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বলা হয়, মৌসুমী বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছধরা নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সকাল ১১টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতিভারী (>৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ওপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় মৌসুমী বায়ু মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি থেকে প্রবলভাবে বিরাজ করছে। সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, খুলনা ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতিভারী পর্যন্ত বর্ষণ হতে পারে। আগামী তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা কমে যেতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ী ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে দেখাতে বলা হয়েছে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত।

হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ফেনীতে বেশ কয়েকটি নদীতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এসব নদীর পানি আরও বাড়ছে। নদীর পানি উপচে বেশ কয়েক জায়গায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জ শহর ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীর পানি বাড়তে থাকে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জ শহরসহ আশপাশের গ্রামগুলো।

হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ওপরেএদিকে খোয়াই নদীর পানি বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। শহরের অনেক লোকজন খোয়াই নদীর বাঁধের ওপর রয়েছে। কোনও স্থানে যাতে ফাটল সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রাখছে স্থানীয়রা।হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে শহরবাসী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। জরুরিভাবে মোকাবিলা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড অতিরিক্ত বালির বস্তা মজুত রেখেছে, যাতে বাঁধের কোনও স্থানে লিকেজ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক মেরামতের ব্যবস্থা করা যায়।

মৌলভীবাজার:টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদী এবং কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী বাঁধরক্ষার চেষ্টা করছেন।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৩ জুন) মনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার এবং ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার (১২ জুন) মনু নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার এবং ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়ি ঢলের পানির ¯্রােতের আঘাতে প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর স্থাপিত বালির বস্তা ভেসে যেতে শুরু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ মনু সেতুর উত্তর দিকের গাছের পাইলিংও ভেঙে যাচ্ছে।কুলাউড়ার হাজীপুর এলাকার বাসিন্দা ছয়ফুল আলম জানান, ‘বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসীরা বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন। হাজীপুর ইউনিয়নে মনু রেল ব্রিজের কাছে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মাতাবপুর, মাদানগর, চক রণচাপ, হাসিমপুর, বাড়ইগাঁও ও মন্দিরাসহ ৬-৭টি এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চক রণচাপ ও মাদানগরে বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন এলাকাবাসী। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবার সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় টুকরি, কোদাল নিয়ে বাঁধের ওপর মাঠি ভরাট করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী। পানি বাড়তে থাকলে মনু নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।অপরদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে। এতে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।কমলগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, মঙ্গলবার ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। আর বুধবার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেভাবে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ধলাই নদীর পানি আরও বেড়ে যাচ্ছে।কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ বলেন, ধলাই নদীর ভাঙনের ফলে ওই গ্রামে আড়াইশ’ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ফেনী:অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মহুরী নদীর বাঁধের আটটি অংশ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এই দুই উপজেলার বহু রাস্তাঘাট, ফসলি জামি, বাড়িঘর ও মৎস্য খামার পানিতে তালিয়ে গেছে। ফুলগাজী বাজারে নদীর পানি ঢুকে দোকানপাটের বেশিরভাগ মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।বুধবার (১৩ জুন) ভোরে নদীর পানি বিপদসীমার তিন মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাঁধগুলো ভেঙে যায়।ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘নদীর বাঁধের পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দুটি অংশ ও ফুলগাজী উপজেলা সদরের উত্তর দৌলতপুর, ধনিমুড়া, বৈরয়া ও বণিকপাড়া অংশের বাঁধ ভেঙে যায়। বাঁধের ফাটল স্থানে পানির ¯্রােতের কারণে বাঁধের কাজ করতে পারছেন না তারা।তিনি বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে কতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে সে বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি।এদিকে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম জানান, তার উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ দৌলতপুর, ধনিয়া মোড়া, শ্রীপুর, বণিকপাড়া ও উপজেলা সদরের একাংশসহ ১০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ব্যাপক মালামালের ক্ষতি হয়েছে। যারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তাদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্ট চলছে বলেও জানান উপজেলা চেয়ারম্যান।

কক্সবাজার: পাঁচদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গাদের জনজীবন। একদিকে বানের টানে ভেসে গেছে হাজারো আশ্রয়কেন্দ্র, পানিতে প্লাবিত হয়েছে ক্যাম্পে পর ক্যাম্প। অন্যদিকে ভূমিধসে বিপর্যস্ত অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে-বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হওয়া যাওয়া ও যোগযোগহীনতার কারণে রোহিঙ্গাদের এখন ত্রাহি অবস্থা এবিষয়ে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সাইট পরিচালনা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস, পানিতে ক্যাম্প তলিয়ে যাওয়া, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, বানের ¯্রােতে আশ্রয়কেন্দ্র ভেসে যাওয়া, বজ্রপাতসহ গত পাঁচদিনে শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। এতে রোহিঙ্গাদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফে গড়ে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গার জনজীবন। তবে বৃষ্টিপাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা এখনও অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থা (রেডক্রস) ও স্বেচ্ছসেবী সংস্থা রেডক্রিসেন্ট কর্মীসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারী বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু এলাকা বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কুতুপালং ৫ ও ৬ বালুখালী ১ এবং ২ এর ক্যাম্পে অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্র। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টিতে নড়বড়ে হয়ে থাকা পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস হয়। এরমধ্যে কুতুপালংয়ে পাহাড় ধসে এক শিশু নিহত হয়। ওইসময় তার মা আহত হন। এছাড়া ১৩ জুন সকালে শফিউল্লাহ কাটায় পাহাড়ধসে ৪ জন আহত হয়েছেন।এবিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের (আইএফআরসি) কক্সবাজার উপ-অফিসের প্রধান সঞ্জীব কাফে বলেন, গত ৯ জুন থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গড়ে ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার রোহিঙ্গার স্বাভাবিক জীবন। টয়লেট ও খাবার পানির সংকটে জীবনযাপন করছেন তারা। তিনি আরও বলেন, বানের পানির সঙ্গে ময়ল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এককার হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সে কারণে ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এটি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

চট্টগ্রাম: রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রাউজানের ২০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ দুই দিন ধরে পানিবন্দি।এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়া, ডাবুয়া, চিকদাইর ইউনিয়ন ও রাউজান পৌরসভা। ভেসে গেছে পুকুর-দীঘির মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু। সোম ও মঙ্গলবার (১২ জুন) দুই দিন পানির নিচে ছিল চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক। চলেনি যান্ত্রিক গাড়ি, জরুরি প্রয়োজনে মানুষ রিকশাভ্যানেই চলাফেরা করেছেন বাধ্য হয়ে। রাউজানের বন্যাদুর্গত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।তিনি বলেন, আমার জীবনে রাউজানে এত পানি দেখিনি। পুরো পৌরসভা একপ্রকার ডুবে গেছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক দুই দিন বন্ধ ছিল। ৫০ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারি ২০ টন চাল এবং বেসরকারিভাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বন্যাদুর্গতদের সহায়তা করেছি আমরা।পাহাড়ি ঢলে পানির নিচে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বলেন, মাছচাষ, চাষাবাদ, পোলট্রি, গবাদিপশু সব শেষ। আমি একজনকে জানি যার ৮০ লাখ টাকার মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। রাস্তাঘাট, সেতুসহ অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সময় লাগবে।