নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবরের দিকে গঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (২০ জুন) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।

কাদের বলেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকার বলতে নতুন কোনো সরকার গঠিত হবে না। বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব নেবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের আকার এতো ঢাউস হবে না। মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট হবে। তবে এ বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন একতরফা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না। অনেক বেশি দল নির্বাচনে আসবে। বিএনপি না আসলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কেন? নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। সেখানে যদি সংবিধান লঙ্ঘন হয় তখনই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিএনপি অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ হবে? বিএনপির উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে তারা ভয় পাচ্ছেন কেন? সিটি নির্বাচনকে তো ভয় পাচ্ছেন না।

বিএনপির দাবি নাকচ করার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এবারও নির্বাচনের আগে সরকারের পরিসর ছোট করা হবে।সংবিধান অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে হবে। সেই হিসাবে, আগামী নির্বাচন হতে হবে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচনকালীন সরকার আকারে ছোট হবে জানিয়ে কাদের বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তখন মন্ত্রিসভা ছোট হবে, তখন ঢাউস মন্ত্রিসভার প্রয়োজন নেই। মেজর কোনো পলিসি বা ডিসিশন নিতে পারবে না, সেই সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে।

দশম সংসদ নির্বাচনের সময় যে সরকার গঠন করা হয়েছিল, তাতে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল অন্য দলগুলোকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। বিএনপিকে তখন প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা তা গ্রহণ করেনি।বিএনপি নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে তাদের। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছে তারা।বিএনপির বিষয়ে কাদের বলেন, দেশে কোনো আন্দোলন হবে না, এটা জানি। কারণ, বিএনপির আন্দোলনে দেশের মানুষ সাড়া দেবে এমন কোনো বস্তুগত পরিস্থিতি দেশে বিরাজমান নেই।বিএনপিরও সাবজেক্টিভ প্রিপারেশন বা প্রস্তুতিমূলক কিছু নেই। সাবজেক্টিভ প্রিপারেশন মানে সুসংগঠনগত প্রস্তুতি, সেটাও তাদের নেই। আবার অবজেক্টিভ কন্ডিশন হল দেশের জনগণের মুড, সেখানেও কোনো অবস্থা নেই।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। নিবন্ধিত অধিকাংশ দলের অংশ না নেওয়ার মধ্যে ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।এবারও কি একেই রকম নির্বাচন হবে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, “বিএনপি না এলেই একতরফা নির্বাচন হয়, এমন নয়। এবার বিএনপির জন্য অন্যরা অপেক্ষা করবে না, বহু দল অংশৃএবার পার্টিসিপেশন অনেক বেশি। ইনক্লুসিভ নির্বাচন হবে।বিএনপিও তো বলেছে তারা আন্দোলনও করবে, নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাজে অসুবিধা কী? একতরফা কেন হবে, বাংলাদেশে কি আর কোনো দল নেই? আপনি যাবেন না বলে কি অন্যরা আসবে না?নিজ এলাকার বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের অভিযোগের বিষয়ে কাদের বলেন, উনি আসন পাবেন কি না, জিজ্ঞাসা করেন। তিনি ২২ বছরের ওখানে কোনো দৃশ্যমান কাজ করেননি। বিদ্যুত বলেন, রাস্তা বলেন। ওনার বাড়ির পাশের স্কুলটাও শেখ হাসিনা সরকার করেছে।নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যে আসনে এখন ওবায়দুল কাদের সংসদ সদস্য, ওই আসনে আগে সংসদ সদস্য ছিলেন মওদুদ।এবার ঈদের সময় বাড়িতে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে মওদুদের অভিযোগ।কাদের বলেন, মওদুদ আহমদের গণতন্ত্র হচ্ছে সকাল ১০টার আগে ভোট শেষ। ব্যারিস্টার মওদুদ বহুরূপী, ওনার রাজনীতিটাই হচ্ছে ফেইক। উনি নয় দিন ওখানে ছিলেন এখন অভিযোগ কেন?তিনি জনসংযোগ করেছেন। পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে গেছে। তার দলে তিন ভাগ, তার বাড়ির সামনে মারামারি করে, তার নিরাপত্তা তো দিতে হবে। তিনি তো বলতে পারেননি, আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে বাধা দিয়েছে। ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, এটা প্রাইম মিনিস্টারের কাছে আছে। আমরা এবার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কমিটি দিচ্ছি। যাতে কমিটি নিয়ে পুরনো অভিযোগগুলো- অমুক সন্ত্রাসী, অমুক অনুপ্রবেশকারী, অমুক সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে ছিল, এসব কথা যাতে না উঠে।এখন একটু ব্যস্ততার সময় চলছে, পাশাপাশি কাজও চলছে, সময় মতো দিয়ে দেব। শিগগিরই দেওয়া হবে।