‘বেপরোয়া গতিতে আসা গাড়িটি প্রথমে ফ্লাইওভারে এক পথচারী পায়ের ওপর তুলে দেয়। তিনি (পথচারী) ওই গাড়ির বাম্পার ধরে ফেলেন। গাড়িটি ব্যাক গিয়ারে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। গতি বাড়িয়ে তিনি আবারও সামনের দিকে এগিয়ে যান। ওই পথচারী ছিটকে ফ্লাইওভারের গার্ডারে গিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ওই পথচারীর। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’ নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরীর এমনই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে সেলিম ব্যাপারী (৪৮) নামের এক ব্যক্তির প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন। তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ঘটনার এমনই চিত্র উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে। তিন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশের কাছেও এমন বর্ণনা দিয়েছেন। নিহত সেলিম ব্যাপারী পেশায় একজন গাড়িচালক। একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার পর তিনিসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে করে ওই গাড়ির পিছু নেন। গাড়িটি ন্যাম ভবনের সামনে গিয়ে থামে। এ সময় এমপিপুত্র শাবাবের সঙ্গে তাদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। ঘটনার কথা কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকিও দেন শাবাব। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে মনে হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার সৈয়দ মামুন মোস্তফা বলেন, গাড়ির মালিক কামরুন নাহার শিউলি নামে এক ব্যক্তি। তবে গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্তের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রাইভেটকারের মালিক কামরুন নাহার শিউলি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী। তিনি (শিউলি) নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান। ঘটনাস্থল থেকে ওই প্রাইভেটকারের নম্বর প্লেট (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫) উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়ির মালিকের বিস্তারিত জানতে নম্বর দিয়ে এরই মধ্যে বিআরটিএ-তে আবেদন করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একরামুলের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি সাংবাদিকদের কাছে গাড়ির মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নুরুল আলম নামে তাদের গাড়িচালক। উত্তরায় এক বান্ধবীর কাছে একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেটি নিয়ে উত্তরা যাচ্ছিলেন নুরুল আলম। নুরুল আলম কোথায় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই গাড়িচালক এখন কোথায় তিনি তা জানেন না। চালক নুরুল আলমকে তারাও খুঁজছেন। এ বিষয়ে জানতে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

কাফরুল থানা পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ঘটনার পর তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী থানায় এসে ঘটনার বর্ণনা দেন। তাদের বর্ণনায় পুরো ঘটনার চিত্র উঠে আসে। গাড়িতে চালক ছাড়া তারা আর কাউকে দেখতে পাননি। গাড়ির চালক ছিল বেপরোয়া। ঘটনার পর গাড়ি নিয়ে চালক পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর রাতেই অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন নিহতের জামাতা আরিফুল ইসলাম ভুইয়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত সেলিম বনানী সেতু ভবনসংলগ্ন ফ্লাইওভার পার হচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেটকার তার পায়ের ওপর তুলে দেয়। এ সময় গাড়ির চাপা খেয়ে সেলিম গাড়ির বাম্পার চেপে ধরেন। তখন গাড়ি ব্যাক গিয়ারে দিয়ে আবারও সেলিমকে চাপা দেয় চালক। এ সময় ফ্লাইওভারের গার্ডারে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান সেলিম। গার্ডারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সেলিমের। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। চালকের পরনে ছিল এক রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট। মোটরসাইকেলে করে ওই গাড়ির পিছু নিলে সেটি ন্যাম ভবনের সামনে গিয়ে থামে। ওই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী। সেখানে তার সঙ্গে আমাদের প্রচণ্ড বাগ্বিতণ্ডা হয়। ঘটনার কথা কাউকে জানালে তিনি আমাদের নানাভাবে হুমকিও দেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, এমপি একরামুল করিমের পরিবারের পক্ষ থেকে সমঝোতার জন্য নিহত সেলিম ব্যাপারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। নিহত সেলিম ব্যাপারীর গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তিনি পরিবার নিয়ে উত্তরখান এলাকায় থাকতেন।