বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণ বর্তমান স্বৈরাচার সরকারকে লাল কার্ড দেখাতে বদ্ধপরিকর। সরকারের আস্ফালন উপেক্ষা করেই জনগণ রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। চিরস্থায়ী ক্ষমতার জন্যই সরকার সংলাপে বসতে চায় না বলে অভিযোগ করেছেন দলে সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।

শুক্রবার (২২ জুন) সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রিজভী অভিযোগ করেন, সরকার জেলকোডের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। চিরস্থায়ী ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই সরকার সংলাপে বসতে চাচ্ছে না।তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে -খালেদা জিয়ার মুক্তি, ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া ও ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন।জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সরকার পতনের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সময়ই বলে দেবে আগামীর আন্দোলন কোনো দিকে যাবে।সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছু শর্তও তুলে ধরেন তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্তই হচ্ছে খালেদা নিঃশর্ত মুক্তি।

রিজভীর ভাষ্য, দেশজুড়ে বিরোধী দল নিধনের কর্মসূচি থামছে না। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে দুমড়েমুচড়ে ফেলতে সরকারের পরিকল্পনা ও নীলনকশা অব্যাহত আছে। তবে সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে।বিএনপিসহ বিরোধী দলকে দূরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সুপরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রিজভীর।

এই রাজনীতিবিদের কথায়, ভোটারবিহীন সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমসহ মানুষের বাকস্বাধীনতা, যা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যোগ করে রিজভী বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে বারবার উত্থাপিত নাগরিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েই বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরালো আওয়াজ উঠছে। অথচ মনুষ্যত্ব ও বিবেক বিসর্জন দিয়ে দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, গুপ্ত হত্যা, অপহরণের অমানবিক সন্ত্রাসী পরিকাঠামো তৈরি করেছে বর্তমান সরকার।চিকিৎসার অভাবে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। দিনের পর দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা না পাওয়ায় খালেদা জিয়ার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা পূর্ণাঙ্গ স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভীর অভিযোগÑগত কয়েকদিনে বিএনপি ও বিরোধী দলের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের পর এখন তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে নিশ্চিত ভরাডুবির ভয়ে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ধানের শীষের সমর্থক ও ভোটারদের তাড়িয়ে গাজীপুর সিটিকে পরিণত করা হচ্ছে শ্মশানভূমিতে, যাতে সুচারুভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়।রিজভীর মন্তব্য, আওয়ামী লীগের বিজয় নিশান নিশ্চিত হয় ভোটডাকাতি ভোটসন্ত্রাস, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল ও অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালনের মাধ্যমে। আর চোখ বন্ধ করে থাকা দায়িত্বহীন নির্বাচন কমিশন হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।