দীর্ঘ আট বছর পর হাজারখানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে আশার আলো দেখছেন হাজারখানেক ননএমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।এ নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে যাচাই বাছাই ও অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) প্রথমবারের মতো ওইসব কমিটির যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে।কমিটির কাজ হবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি জন্য আবেদন সংগ্রহ করা এবং যাচাই বাছাই শেষ করে সরকারের কাছে সুপারিশ করা।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে নয় সদস্যের ‘প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটি’।এই কমিটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।প্রতিষ্ঠানের আবেদনের তথ্যে কোনো অনিয়ম বা অসামঞ্জস্য থাকলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও সরকারের কাছে সুপারিশ করবে কমিটি।

আর অনলাইনে আবেদন গ্রহণের জন্য ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে আট সদস্যের কারিগরি কমিটি। এই কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করবে। আবেদনগুলোর ডেটা প্রসেসিং কার্যক্রমও তদারক করবে এই কমিটি।সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রেডেশন তালিকা ‘প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটির’ কাছে উপস্থাপন করবে এই কমিটি।মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালার ভিত্তিতে হাজার খানেক স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির কথা বলছে। তবুও প্রেসক্লবের সামনে আন্দোনল করছেন এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকরা। তাদের দাবি নতুন নীতিমালা অনুযায়ী নয়, পুরোনো নীতিমালা অনুযায়ী স্বীকৃতি পাওয়া সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে। তারা ইতোমধ্যে হুশিয়ারিও দিয়েছেন আজ রোববারের মধ্যে এমপিওভুক্তির ঘোষণা না এলে আগামীকাল সোমবার থেকে আমরণ অনশনে যাবেন শিক্ষকরা।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, সারা দেশে কি পরিমাণ স্বীকৃত পাওয়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং এর মধ্যে কতগুলো এমপিওভুক্ত হওয়ার মতো অবস্থায় আছে, সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনসহ আনুসঙ্গিক প্রাথমিক কাজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন।

তিনি জানান, অর্থ বিভাগের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যে কথাবার্তা হয়েছে, তাতে হাজারখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে বলে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটেও সেভাবেই অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, কত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বলা যাবে। আর কত প্রতিষ্ঠান হবে সেটা একেবারে সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে তাঁরা এমপিওভুক্ত করার কাজটি শুরু করেছেন। শিগগিরই আবেদন নেওয়া হবে।বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে নয়শ’ কোটি টাকা।এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হল- হাজারখানেক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার।