গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও খুলনা মডেলের ছিল বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সংস্থাটির মতে, খুলনা মডেল মূলত ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের মডেল। এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রধান প্রতিপক্ষকে মাঠ ছাড়া করা হয়।আর নির্বাচনের দিন বিএনপি প্রার্থীর পুলিং এজেন্টকে দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি জোর জবরদস্তি করা হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বিকার ভূমিকায় থাকে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনির মিলনায়তনে ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুজন কর্মকর্তারা এ মডেল নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন।এতে ভবিষ্যতের তিন সিটি নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে আট দফা সুপারিশ করেছে সুজন।সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে নির্বাচন কমিশনকে জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিগতভাবে আমরা নতুন সংকটের মুখোমুখি হতে পারি, যা দেশকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিতে ধাবিত করতে পারে।সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমাদের প্রত্যাশা- নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের চিহ্নিত ত্রুটিগুলো সংশোধন করবে। এবং আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার গাজীপুর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন। প্রসঙ্গত,গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প (ইডব্লিউজি)।গাজীপুরের ৪২৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পুরো ৫৭টি ওয়ার্ডের ১২৯টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। এ সময় তারা ১৫৯টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা লক্ষ্য করেন।গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানায় ইডব্লিউজি।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইডব্লিউজির পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ইডব্লিউজি যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে, সেগুলোর মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্রে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব অনিয়মের ঘটনা বেশিরভাগই ঘটেছে দুপুরের পর।অনিয়মের মধ্যে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অনধিকার প্রবেশ ও অবস্থানের কথা তিনি উল্লেখ করেন।

আবদুল আলীম জানান, অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষণকৃত ১২টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়, এর মধ্যে ৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পুনরায় চালু হয়।ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে ভোটারকে প্রবেশ করতে না দেয়ার ছয়টি ঘটনা ঘটেছে। ভোটকক্ষে ভোটার প্রবেশের পর আঙুলের কালির ছাপ দিয়ে বলা হয়েছে- আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে এমন ঘটনা ঘটেছে তিনটি। কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনা তিনটি। ছয়টি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রচার চালানো হয়েছে এমন ঘটনা ২৮টি। ভোটকেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশ দেখা গেছে এমন ঘটনার সংখ্যা ৩০টি। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসতার ঘটনা আটটি। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সহিংসতা ঘটেছে নয়টি। অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে ২১টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন ঘটনা পাঁচটি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রার্থী কর্তৃক যানবাহন সরবরাহ করার ঘটনা ২৪ ও অন্যান্য অনিয়মের ঘটনা ১৬টি।