র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অভিযানের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতাল, রোগ নির্ণয়কেন্দ্র এবং চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ ঘোষণা করেছে হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো।রোববার বেলা আড়াইটার দিকে আকস্মিকভাবে এই চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী আর তাদের স্বজনরা।

বেসরকারি ক্লিনিক ল্যাব সমিতি এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার সমিতি। এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা।নগরের মেহেদীবাগে ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান চলার সময় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।এদিকে অভিযানে হাসপাতালের ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন না করা, বাইরের রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনাসহ ম্যাক্স হাসপাতালের নানা অনিয়মের তথ্য পায় র‌্যাব।

অভিযান চলার সময় ম্যাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাব সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী খান বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। জানতে চাইলে লিয়াকত আলী খান বলেন, র‌্যাব অতর্কিত এসে ম্যাক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ল্যাবে অভিযান শুরু করে। এর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিক ও ল্যাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগতভাবেও রোগী দেখা বন্ধ রাখবেন।এই কর্মসূচিতে বিএমএ চট্টগ্রাম পূর্ণ সমর্থন দেয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি মুজিবুল হক খান বলেন, বিভিন্ন ক্লিনিকে অভিযানের কারণে সমিতি ক্লিনিক, ল্যাব এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ ঘোষণা করেছে। এর সঙ্গে বিএমএ সংহতি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন রাতে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফিদা খান নামে এক শিশু মারা যায়। এরপর রাফিদার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান চিকিৎসকের অবহেলায় রাফিদার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রাফিদার চিকিৎসায় অবহেলা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।এর আগে বিএমএর সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের চিকিৎসা না করা এবং বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।রোববার দুপুরে হাসপাতাল মালিকদের ওই ঘোষণার পর রোগী নিয়ে প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য গিয়ে অনেককেই ফিরে আসতে হয়েছে। চার দিন ধরে ভর্তি এক রোগী হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে।

বন্দরনগরীর মেহেদীবাগে ম্যাক্স হাসপাতালে গত মাসের শেষে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার পর তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এর ভিত্তিতে শনিবার দুই চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এরপর রোববার ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পান র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই অভিযানের মধ্যেই নগরীর জিইসি মোড়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয়ে প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ল্যাব ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের ‘জরুরি বৈঠক’ হয়।পরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা রোগীরা এই ঘোষণার আওতায় পড়বেন না; তাদের চিকিৎসা চলবে।কিন্তু তার ওই ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পর ম্যাক্স হাসপাতালের এক রোগীকেই চিকিৎসা না পেয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। অনু তালুকদার নামের ওই নারী পেটে ব্যথা ও বমির লক্ষণ নিয়ে গত ৪ জুলাই থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।তার সঙ্গে থাকা আত্মীয় কমল তালুকদার বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাদের বলেছে ডাক্তার নেই। তারা চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় আমরা এখন আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছি।

রোববার দুপুরে সেবা বন্ধের ওই ঘোষণা আসার পর বন্দরনগরীর প্রবর্তক মোড়ের সিএসসিআর ক্লিনিকে গিয়ে মূল ফটক বন্ধ দেখা যায়।ওআর নিজাম রোডের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে গেলে জানানো হয়, তাদের সেবা বন্ধ, রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আর রয়্যাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শাটার অর্ধেক ফেলা, ভেতরে লোক নেই।বেলা ৩টার দিকে কয়েকটি পরীক্ষার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে বিফল হয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় গুলশান আরা নামের এক নারীকে। তিনি জানান, তার দশ বছর বয়সী ছেলের সকাল থেকে পেটে ব্যথা। ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সেই পরীক্ষাই তিনি করাতে পারছেন না। বেসিক ল্যাব আর পপুলার ডায়াগনেস্টিকে গিয়ে পরীক্ষা করাতে না পেরে ম্যাক্সে এসেছিলাম। কিন্তু এখানেও পরীক্ষা করেনি। বলেছে ডাক্তার নেই, পরীক্ষা হবে না।অভিযানের রপর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “সবাই আইন মানতে বাধ্য। আমি মনে করি আমাদের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট। এ ধরনের অনিয়মকারী দুয়েকটা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক।