ঝিনাইদহের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজারে কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে একেবারে পানির দওে, চাষিরা পড়েছেন মহা বিপাকে। বাজারে এত পরিমান কাাঁঠাল আমদানি হচ্ছে ফলে ক্রেতার বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। বড় সাইজের (১৫ কেজির উপরে) বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মাঝারি সাইজের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫-২০টাকায়। এই এলাকার অনেক কাঁঠাল চাষী তাদের কাঁঠালের দাম না পাওয়ায় ছাগল গরুকে খাওয়াচ্ছেন। জাতীয় ফল কাঁঠাল আকারে বড় পুষ্টি ও গুনমান অনেক বেশি। কাঁঠালের কোন অংশই অপ্রয়োজনীয় নয়। পাকা কাঠালের কোশ সুস্বাদু খাবার, বাকল গবাদি পশুর খাদ্য,বীজ ও কাচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। ঝিনাইদহন, মহেশপুর উপজেলার মাঠি কাঠাল চাষের জন্য উপযোগী। কোন না কোন বাড়ির আঙিনায় ৪/৫টি কাঠাল গাছ আছেই। অনেকে আবার বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন। কাঠাল গাছে তেমন পরিচর্যা করতে হয় না। জেলায় এবার কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার মহেশপুর উপজেলা খালিশপুর বাজারে সপ্তাহে ২দিন কাঁঠালের হাট বসে। শুক্রবার ও সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে কাঠালের হাটে কাঁঠাল বেচা-কেনা হয়। এবার প্রতি হাটে এখান থেকে প্রায় ৬০-৭০ ট্রাক কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম একেবারের নগন্য। অন্য বার যেখানে বড় সাইজের একটি কাঁঠাল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হতো সেখানে এবার মাত্র ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি সাইজের কাঁঠাল ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ টাকায়। শুক্রবার সকালে খালিশপুর কাঠালের হাটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ স্যালোইঞ্চিন চালিত নসিমন, করিমন ভ্যান করে কাঁঠাল আনা হয়েছে। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাজারে কোন ক্রেতা/কাঁঠাল ব্যবসায়ীকে দেখা যায়নি। খালিশপুর-মহেশপুর ও কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের দুধারে দাড়িয়ে আছে কাঁঠাল চাষীরা কাঠাল বিক্রির অপেক্ষায়। খালিশপুরের কাঁঠাল ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম জানান, জেলার সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট খালিশপুর বাজার। এখানে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, জীবননগর, চৌগাছা এলাকা থেকে কাঁঠাল চাষী ও ব্যবসায়ীরা কাঠাল বিক্রি করতে নিয়ে আসে। সপ্তাহে ২দিন এখানে কাঁঠাল কেনা বেঁচা হয়। ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারীরা কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা খালিশপুর বাজার থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, এখানে সাধারণত কাচা কাঁঠাল বিক্রি করা হয়। সড়াতলা গ্রামের কাঁঠাল চাষী ছামছুদ্দিন তরফদার জানান, তার প্রায় ৪০টি কাঠাল গাছ রয়েছে। এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এক একটি গাছে ৫০-৬০টি কাঁঠাল ধরেছে। তার ৪০টি কাঁঠাল গাছে প্রায় ১ হাজার ৫শ কাঁঠাল ধরেছে। তিনি জানান, গত বছর বড় সাইজের কাঁঠাল বিক্রি করেছিলাম ৬০-৭০ টাকায়। আর এবার বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৩০/৪০ টাকায়। তাও আবার ক্রেতার অভাব দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকজন কাঁঠাল ব্যবসায়ী ও কৃষক জানান, যদি এলাকায় সরকারীভাবে কাঁঠাল চাষীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ও কাঠাল সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা থাকতো তাহলে সারা বছর এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁঠাল সরবরাহ করা যেতো। ঝিনাইদহ মহেশপুর কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা জানান, উপজেলার অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায়, পতিত জমিতে কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। এছাড়াও অনেক কৃষক বাণিজ্যিক ভাবে কাঁঠালের চাষ করছেন। কাঁঠাল গাছ তেমন একটা পানি সহ্য করতে পারে না। এ অঞ্চলের স্থলভাব অপেক্ষাকৃত উচু হওয়ায় স্থানীয় কোন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না। যার কারনে ঝিনাইদহ জেলার সব উপজেলায়ই প্রচুর পরিমানের কাঁঠাল উৎপাদন হয়। তবে মহেশপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। তিনি আরো জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে কাঠালের বাজারে প্রচুর পরিমানের কাঁঠাল এসেছে।