রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়ে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। গুম করতে লাশ গাড়িতে করে নেওয়া হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে। সেখানে লাশে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসিয়ে দেওয়া হয় চেহারা। কিন্তু এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি পুরো ঘটনাই ফাঁস হয়ে গেছে। ধরা পড়েছে খুনি দলের অন্যতম সদস্য রহমতউল্লাহ। পুলিশ তার কাছ থেকে খুনের আদ্যপান্ত জানতে পেরেছে। খুনি দলের অপর আট সদস্যদের মধ্যে তিন নারীও রয়েছেন। পরিদর্শক মামুন ইমরান খান ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ট্রেনিং স্কুলের কর্মকর্তা। নিখোঁজের দুদিন পর গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় পুলিশ কর্মকর্তার লাশ।

গত রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন পরিদর্শক ইমরান। এ ঘটনার পরদিন সবুজবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার ভাই। এরপর তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে। এদের মধ্যে রহমতউল্লাহ রয়েছেন। গতকাল বনানী থানায় মামলা করেন ইমরানের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান।

নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ইমরানের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের রাজরামপুর গ্রামে। বাবা মৃত আজহার আলী খান। ইমরান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। ২০০৫ সালে এসআই হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল ঢাকার শান্তিনগরে পুলিশের বিশেষ শাখার ট্রেনিং স্কুল। তিনি শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করেছেন। অবিবাহিত ইমরান বড় ভাইয়ের সঙ্গে সবুজবাগে বসবাস করতেন। চাকরির পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করতেন তিনি।

পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, পূর্বপরিচিত নারীর জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত রবিবার ইমরানকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার একটি বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। সেখানেই খুন হয় তাকে। পূর্বপরিচিত নারীর উপস্থিতিতে তার সহযোগীরা তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ইমরানকে হত্যা করে। হত্যার পর গাড়িতে করে ইমরানের মরদেহ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লাশ গুম করার চেষ্টা চালায় তারা। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে লাশের হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে ফেলে আসে।

এ ঘটনায় পেশায় প্রকৌশলী রহমতসহ ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলো- শেখ হৃদয় ওরফে আপন, স্বপন, দিদার, মিজান, আতিক, রবিউল, সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া, মেহেরুন নেসা স্বর্ণা ওরফে আফরিন এবং ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা।

পুলিশ সূত্র জানায়, এর আগে পেট্রল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে লাশের চেহারা বিকৃত করা হয়। তিন দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে ইমরানের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে এই ঘটনায় জড়িত এক নারীকে যশোর সীমান্ত হয়ে দেশের বাইরে পালানোর সময় আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়। সন্দেহভাজন আটক ওই নারীকে রাতে যশোর থেকে ঢাকায় আনার কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করেনি। তদন্তের এ পর্যায়ে অভিযুক্ত ওই নারীর নাম কিংবা হত্যার কারণ স্পষ্ট করেনি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। প্রেমঘটিত, না কি অন্য কোনো বিরোধে এ হত্যা করা হয়েছে, তাও পরিষ্কার করে জানাচ্ছেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু হত্যার কেন্দ্রে একজন নারী রয়েছেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে সূত্রটির দাবি।

গ্রেপ্তারকৃত রহমতউল্যাহ মামুন ইমরান খানের পূর্ব-পরিচিত ছিলেন। ঘটনার রাতেই প্রথমবারের মতো ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন মামুন। কে, কেন এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলেছে রহমত, না ৩ নারীর কেউ, নাকি এর বাইরে তৃতীয় কেউ তা এখনও স্পষ্ট নয়।

একটি সূত্র বলছে, বিত্তবানদের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ করে দেয় ঘাতকচক্র এবং একপর্যায়ে ফাঁদ পাতে। তারা প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে আগতদের আইনের ভয়ের পাশাপাশি লোকলজ্জার ভয় দেখিয়ে বিপাকে ফেলে। এর পর মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই চক্রে নায়িকাও রয়েছেন।