বাংলাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি মাদক ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারকে একটি তালিকা দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি।পালিয়ে যাওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

বৃহষ্পতিবার বিজিবি ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ- বিজিপির যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান।যৌথ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সীমান্ত সম্মেলনে উত্থাপিত বিষয়গুলোর মধ্যে মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবার ব্যাপকতার বিষয়ে উভয় পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।উভয় পক্ষ সব ধরনের মাদক চেরাচালান প্রতিরোধে পরস্পরকে সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।দুদেশের যৌথ প্রেসব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতন ও হত্যাক২ন্ডের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ক্ষেপে ওঠেন মিয়ানরমারের কর্মকর্তারা।প্রশ্ন শুনেই ‘অবজেকশন’ বলে দাঁড়িয়ে যান মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।তারা এ বিষয়ে কোনও কথা না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যানÑ একইসঙ্গে প্রশ্নটি ‘আউট অব অ্যাজেন্ডাবলে উল্লেখ করেন বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান।

বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের এ সীমান্ত সম্মেলনে দুই দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি অনেক বড় বিষয়। এটা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে।লিখিত যৌথ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সম্মেলনের পূর্বনির্ধারিত আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে উত্থাপিত বিষয়গুলোর মধ্যে মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবার ব্যাপকতার বিষয়ে উভয় পক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।সীমান্ত সম্মেলনে সম্প্রতি মিয়ানমারের নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রমসহ সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ ধরনের কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বন্ধে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।সীমান্তে মাদক, অস্ত্র, নারী ও শিশু পাচারসহ সবধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষে সমন্বিত যৌথ টহল, সীমান্তে নজরদারি ও অন্যান্য তৎপরতা বৃদ্ধি, উভয় পক্ষের মাঠ পর্যায়ের অধিনায়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা এবং সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় পরস্পরের মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

সীমান্তে মাইন বা আইইডি অপসারণ প্রসঙ্গে উভয় পক্ষ বিস্তারিত আলোচনা করে এবং মিয়ানমার পক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষে তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে সম্মত হয়েছে।উভয় পক্ষই বর্ডার লিয়াজোঁ অফিসের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেÑএ প্রসঙ্গে মিয়ানমার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মংডুতে ইতোমধ্যে একটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, টেকনাফ উপজেলায়ও অনুরূপ একটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।এই সীমান্ত সম্মেলন ফলপ্রসু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উভয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। উভয় পক্ষ সীমান্তে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। সিনিয়র পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন মিয়ানমারের নেপিতোতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।৯ জুলাই থেকে ১২ জুলাই ঢাকায় এ সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিজিপির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন।