বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিন সিটিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। শুক্রবার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একথা বলেন।রিজভী বলেন, যে দেশে আইনের শাসন নেই, সে দেশে আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীকে ভোটারদের সঙ্গে নয়, বরং সরকারের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। সুতরাং আগামী নির্বাচনগুলো কোন রং ও রূপে আত্মপ্রকাশ করবে, তা এখনই খুব সহজে অনুমান করা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা হামলার হুমকির মুখে নেতাকর্মীদের সিটি করপোরেশন নিজ এলাকার বাইরে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর গ্রেপ্তারের হিড়িক তো চলছেই।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন,বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে নাÑএমন নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), সরকারের হুমকির মুখে প্রতিরোধহীন আত্মসমর্পণ। খুলনা ও গাজীপুরে অনুসৃত নীতি বাস্তবায়ন করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই ইসির অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ও গোয়েন্দা পুলিশের ওসির প্রত্যাহার চাইলেও ইসির স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগে কান না দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন। রাজশাহী শহরজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এমনভাবে পোস্টার সেঁটেছে যে সেখানে অন্য কারো পোস্টার লাগানোর কোনো জায়গাই নেই। সিলেটে ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রচার-প্রচারণা বিরত রেখে থানার সামনে অনশন করতে হচ্ছে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির জন্য। বরিশাল ও রাজশাহীতে সরকারি দলের পক্ষ থেকে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে। অস্বাভাবিক টাকা খরচ দৃশ্যমান হলেও সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন।নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিগত কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার জন্য কারাগারের সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। সুতরাং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মিথ্যা তথ্যের সাজানো মামলায় ক্যাঙ্গারু আদালত কর্তৃক সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে।কোটা আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, হাইকোর্টের রায় থাকায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা সম্ভব নয় বলে গতকাল জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে তিনি ছাত্রদের তুমুল আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিলের কথা কেন বলেছিলেন? তখন তো হাইকোর্টের রায় ছিল। তখন তাঁর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে ’৭১-এর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দিয়ে হামলা করাতেন না। এ হামলা পরিকল্পিত, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা করা হয়েছে।
রিজভী আরো বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে যেকোনো ঘোষণা মানেই সেটি আইনের সমতুল্য এবং তা কার্যকর হতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায়নি, তারা কোট সংস্কার চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যে এটা এখন সুস্পষ্ট যে তিনি ছাত্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই সেদিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেদিন আমরা বলেছিলাম, কোটা বাতিলের ঘোষণা একটা ধাপ্পাবাজি।আন্দোলনে ছাত্র নেতাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্যই দিনদুপুরে তিনি মেকিয়াভেলির (ইতালির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও দার্শনিক নিকোলো মেকিয়াভেলি) চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঈদের পর আবারও ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন দলনপীড়নের নিষ্ঠুর পথ।কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা রাশেদকে দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে থেতলে দেওয়া হচ্ছে। তাকে নির্যাতনের কাহিনী শুনলে কোনো মানুষই চোখের পানি আটকে রাখতে পারবে না।তিনি বলেন, রাশেদের মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একের পর এক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের এখন গ্রেফতার করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন আন্দোলনের পরিণতি কত ভয়ংকর হতে পারে। সরকার প্রধান যে কত ভয়াবহ প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে তার একের পর এক দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি।রিজভী বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে যে কোন ঘোষণা মানেই সেটি কার্যকর হতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায়নি তারা কোটা সংস্কার চেয়েছিল।প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যে এটা এখন সুস্পষ্ট যে, তিনি ছাত্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই সেদিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন।মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহীন প্রমুখ।