প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি শান্তির জন্য ব্যবহার করা হবে। শনিবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বের ৩২তম দেশ হিসেবে এ যুগেও প্রবেশ করল। তবে এ শক্তি আমরা শান্তির জন্য ব্যবহার করবো।’

আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্প থেকে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। পরের বছর (২০২৪) এর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আসবে একই ক্ষমতার বিদ্যুৎ।

রাশিয়া সরকারের সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশটির প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সুদিনে ও দুর্দিনে পাশে থাকে তাদেরকে আমরা শ্রদ্ধাও কৃতজ্ঞতা জানাই। রাশিয়া শুধু যুদ্ধকালিন সময়ে নয়, তারপরেও বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। একইভাবে ভারতও আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে, দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু দেশের যে পররাষ্ট্রনীতি রেখে গেছেন, তার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”

প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে কোনো কোনো মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন। বিশেষ করে এ নিরাপত্তা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পারমাণবিক ও সার্বধুনিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ন ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে রূপপুরে।
এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে।

এর আগে দুপরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে পাবনায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এসময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করে তিনি। গত বছরে এ প্রকল্পের মূল স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভোনোভিচ বোরিসভ, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিচালক মি. দোহি হান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ড. ইয়াফেস ওসমান। এ সময় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তিন বাহিনির প্রধান, পুলিশের আইজিপিসহ সরকারি-বেসরকারি শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পাবনার রূপপুর এলাকার এক হাজার ৬২ একর জমিতে দুই ইউনিটে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নির্মাণ হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সব্বোর্চ ব্যয়ের প্রকল্পটি। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কারিগরি গবেষণার জন্য ৫০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। পরে একই বছরে রূপপুরে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় এ প্রকল্পের। রাশিয়ার সহায়তায় এ প্রকল্পে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।