দীর্ঘ ৪৬ বছর পর পাবনাবাসীর অন্যতম প্রাণের দাবী স্বপ্নের রেলপথ আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করলো। পাবনার পুলিশ লাইনস মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর রেললাইনের উদ্বোধন করেন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে রেল চলাচলের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নাটোরের এমপি আবুল কালাম আজাদ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন, মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, রাজশাহী চীফ সিগন্যাল এন্ড টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার অসীম কুমার তালুকদার, জেনারেল ম্যানেজার মুজিবুর রহমান সহ উর্ধতন কর্মকতারা।
আনুষ্ঠানিক রেলচলাচল উদ্বোধনকালে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী আজ পুরণ হলো। আজ থেকে ঈশ্বরদী-পাবনা রুটে ট্রেন চলবে নিয়মিত। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকায় রেলপথ যোগাযোগে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৬টি ট্রেন চলাচল করছে। আরও ট্রেন বাড়ানো দরকার। সেই লক্ষ নিয়েই এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ কমাতে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়াও বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন সংযোজন, লাইন নির্মাণ কাজ চলছে।
জানা যায়, ১৯৭২ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনা-নগরবাড়ি রেললাইন প্রকল্প হাতে নেন এবং ওই সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জমি অধিগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার পর রেললাইন প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। রাজনৈতিক নানা প্রতিকূলতার কারণে এই প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি আবার ফাইল চাপা পড়ে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটির বৈঠকে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মাঝগ্রাম হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার ট্রেন চলাচলের জন্য আজ শনিবার থেকে উন্মুক্ত করা হলো। পরবর্তী ৫৩ কিলোমিটার দ্বিতীয় ধাপে শেষ করা হবে এই বছরের সেপ্টেম্বরে।
রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনা এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেনটি প্রতিদিন ঈশ্বরদী-পাবনা-রাজশাহী-পাবনা-ঈশ্বরদীতে ৪২৩ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার এ ট্রেনে থাকবে এসি সিগ্ধা, চেয়ার কোচ, ননএসি ও শোভন। পাবনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ৭টা ১৫মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল ৯টা ৩৫মিনিটে। এরপর রাজশাহী থেকে সন্ধ্যা ৭টা ১৫মিনিটে ছেড়ে পাবনা পৌঁছাবে রাত ৯টা ১৫মিনিটে।