চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফতেপুর গরুর বিট-খাটাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের জাল স্বাক্ষরে চলছে। চোরাই গরু-মহিষের রমরমা ব্যবসা চলছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ এরই মধ্যে এই চক্রটি অবৈধভাবে ৭ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। যদিও বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিট-খাটাল মালিকরা। বিট মালিক ও স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের পকেট ভরছেন সেই টাকা দিয়ে। জেলা প্রশাসন বলছেন, জলা ট্রাসপোসের সুপারিস ছাড়া এই ধরণের বিট-খাটালের অনুমোদনগুলো আসা উচিত নয়। আর জেলা ট্রাসপোসকে বাইপাস করে আদালত বা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনে দ্বিমত প্রকাশ করলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হাসান। আর বিজিবি বলছেন এ ঘটনায় যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নদী পথে, কখনো আবার স্থল পথে! এভাবেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় চোরাই গরু-মহিষ। আর এসব গরু-মহিষ তোলা হচ্ছে সীমান্ত সংলগ্ন ফতেপুর বিট-খাটালে। যেখানে করিডোরের মাধ্যমে কাষ্টমসকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে ছাড়পত্র নিয়ে বৈধ করা হয় এসব চোরাই গরু-মহিষ। এমনই একটি বিট-খাটাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর বিওপি সংলগ্ন ফতেপুর বিট খাটালটি। যেটি অবৈধভাবে পরিচালনা করছেন শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কেনাল আলী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দু’মাস ধরে এই খাটালটি পরিচালিত হচ্ছে জোচ্চুরির মাধ্যমে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের স্বাক্ষর জাল করে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অবৈধ এই খাটাল থেকে জোরপূর্বক গরু-মহিষের জন্য জোড়া প্রতি ১২ হাজার ৪০০টাকা করে আদায় করছেন খাটাল মালিকরা। আর এই টাকা বিট মালিক কেনাল আলী ছাড়াও; স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের পকেটে পুরছেন। গরু ব্যবসায়ী এনামুল জানান, সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে কয়েকশোগুন বেশি অর্থ আদায় করছেন বিট-খাটাল মালিক কেনাল আলী।

স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, সরকারী নিয়ম জোড়া প্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা হলেও বিট খাটালের মালিকরা আমাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে জোড়া প্রতি ১১ হাজার ৮৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে টাকা নেয়। তিনি আরো জানান, স্থানীয় প্রশাসন এই নেই কোন ভূমিকা।গরু ব্যবসায়ী স্বপন শাহা জানান, একজন গরু ব্যবসায়ী তাদের সাথে অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে কথা বললে তারা কিছুই মনে করে। চোখ-মুখ দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী সমির জানান, জীবনের ঝুকি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত থেকে গরু নিয়ে আসি আমরা। কিন্তু এ পাড়ে এসে কোন ভাল হয় না আমাদের। গরু জোড়া প্রতি অতিরিক্ত গন্তে হয় ১১ হাজার ৮৫০ টাকা। যা আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সরকার কম দামে গরুর মাংস খাওয়াতে চাইলেও আমরা তা পাড়ছি না। কারণ বিট-খাটালে বেশি টাকা দেওয়ার জন্য গরুগুলো বিক্রি করতে হয় বেশি টাকায়। আর প্রভাব সরকারের উপর। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগকারী আব্দুস সালাম জানান, নিজের জন্য এই ফতেপুর বিট-খাটালের আবেদন করি এবং এ বিটের জন্য আর কেউ আবেদন করেছে কিনা তা যাচাই-বাছাইকালে এই কেনাল আলী কর্তৃক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিবের স্বাক্ষর, স্মারক ও তারিখ জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।ফতেপুর বিট-খাটাল মালিক পক্ষের প্রতিনিধি মোঃ মুক্তার হোসেন জানান, সরকারি হিসাব অনুযায়ী খাটালে প্রতিটি গবাদি পশুর জন্য ২০ টাকা ও অতিরিক্ত প্রতিদিনের জন্য ৩০ টাকা হারে ফি আদায় করে থাকি আমরা। বাড়তি কোন টাকা আদায় করা হয় এই বিট-খাটালটিতে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান, কেনাল আলী ফতেপুর বিট খাটালের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কোন প্রকার অনুমতি নেয়নি। কিন্তু আদালতের আদেশের কপি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিজিবির কাছে এই বিট-খাটালটির অনুমতি নেয়। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান কাস্টমসের ৫০০ টাকা ও বিট-খাটালের ৫০ টাকা ছাড়া অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে কিছুই জানে না তিনি। তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি বিজিবির দায়িত্ব বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একান্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের স্বাক্ষর জালের বিষয়টি জানাতে চাইলে তিনি জানান, সম্প্রতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি লিখিত চিঠি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত-২ অধিদপ্তরের উপ-সচিব আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে লিখা আছে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। কিন্তু এটা আইনগত ভাবে আগাতে হবে বললেন জেলা প্রশাসক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাসপোসের সুপারিস ছাড়া এই ধরণের বিট-খাটালের অনুমোদনগুলো আসা উচিত নয়। আর জেলা ট্রাসপোসকে বাইপাস করে আদালত বা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনে দ্বিমত প্রকাশ করলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হাসান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল সাজ্জাদ সরোয়ার জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাওয়ার পর এ বিষয়ে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। তবে তিনি বলেন, বিটটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন হয়েই আসছে। তাই আইনগতভাবে এটি চালাতে কোন বাধাও নেই। তবে ফতেপুর বিট-খাটালে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যান তিনি। শিবগঞ্জের কানসাট করিডোর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে প্রায় ১২ হাজার ৪৭৯ টি গরু-মহিষ করিডোর হয়েছে। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৬২ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর বিট খাটাল মালিকরা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন ৭ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার ৩৫০ টাকা।