আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার প্রধান শর্ত হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে দলটির উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশ ফখরুল এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন করতে হলে এক নম্বর পূর্বশর্ত হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না এবং এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

এসব দাবির ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সকল রাজনৈতিক দলসহ পেশাজীবীদের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবির নেতৃত্বে বাম মোর্চা গঠনের জন্য তাদের অভিনন্দন জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমি অভিনন্দন জানাতে চাই আটটি বাম রাজনৈতিক দলকে, তারা মোর্চা গঠন করেছে। জনগণের এই ইস্যুগুলোকে তারা দাবি হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে। এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। যার মধ্য দিয়ে আমরা এদের পরাজিত করতে পারব এবং জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যাই।’

প্রখর উত্তাপের মধ্যে স্বল্প সময়ে সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা আসায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিনন্দন জানিয়েছেন। এরপরে যেকোনো কর্মসূচিতে এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অংশ গ্রহন করবেন-সেটাই হবে আমাদের মুক্তির পথ। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন, আন্দোলন ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করা হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যদি বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রেখে সরকার আরেকটি ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির মতো কোনো প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়-তা এ দেশে হতে দেওয়া হবে না এবং দেশনেত্রীকে ছাড়া নির্বাচন হতে দেবে না। এই সরকার স্বৈরাচারি সরকার। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আগামীকাল সরকারি দল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জনসভা করবেন। সরকারি খরচে সরকারি আমলারা এই জনসভার ব্যবস্থা করবেন। দেখাবেন বিশাল জনসভা। সত্যিকার অর্থে যদি তাদের সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার না করেন তাহলে এর চাইতে কম লোকের সমাগম সেখানে হবে। কিন্তু দেখানো হবে খুব বড় সমাবেশ।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের একটাই মুক্তি উদ্দেশ্য দেশনেত্রীর মুক্তি চাই, তাকে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাব। কেউ যদি মনে করেন ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন, সেই আশা করবেন না। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং তার নির্দেশ মতো আমরা নির্বাচনে যাব।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তারা এই অবৈধ সরকারকে আর দেখতে চায় না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে না পেলে নির্বাচন নয়।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন,রফিকুল ইসলাম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুর কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের নুরুল ইসলাম খান নাসিম, জাসাসের হেলাল খান, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ।

সর্বশেষ খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। এরপর কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এবার অনুমতি দিলেও ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সমাবেশের জন্য ২৩টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কর্মসূচির কার্যক্রম বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সীমাবদ্ধ রাখা, বিকেল ৫টার মধ্যে কর্মসূচির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে হবে। এই সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন সড়কের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।