জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নাটোরের সিংড়ায় প্রতিপক্ষ বাবা সুলতান বাহিনীর হুমকির মুখে গত ২৫ দিন ধরে ৭ পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। গত ২৭ জুন সিংড়া উপজেলার দুর্গম রামানন্দ খাজুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আমজাদ হোসেন, আনিস, রইস, মামুন, ফারুক হোসেন ও শহিদুল ইসলাম নামে ৭ কৃষকের বাড়ি ঘরে প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এর পর প্রতিপক্ষ সুলতান বাহিনীর অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকির মুখে নির্যাতিত ওই ৭ পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা করে দিলেও এখনও নিজ গ্রামে ফিরতে পারেনি ওই সাত পরিবার। ভুক্তভোগী ওই সব পরিবারের অভিযোগ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের দেওয়া আশ্বাসের পর নারী সদস্যরা গ্রামে ফিরে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন আবারও বাড়ি ঘরে হামলা করে এবং নারী সদস্যদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে সুষ্ঠ বিচার দাবী করেছেন।

নির্যাতিত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন,এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এনামুল, বাবা সুলতান ও তার ভাই ফেরদৌস বাহিনী আমার সুখের সংসার ভেঙে তছনছ করেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে তারা বাড়িতে ঢুকে জিনিস পত্র ভাংচুর ও চাল, ডাল, টাকা-পয়সা সবই লুটপাট করে নিয়ে গেছে। শুধু জীবনটা নিয়ে পালিয়ে এসেছি। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কি আর বসত ভিটায় ফিরতে পারব না? কেউ কি নেই আমাদের একটু খবর নেয়ার?নির্যাতিত কৃষক মামুন ও ফারুক হোসেন বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবা সুলতান বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলে না। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাদের হুমকির মুখে প্রায় একমাস ধরে গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছিনা ।কৃষক আনোয়ার হোসেন, আয়েন উদ্দিন ও আমজাদ হোসেন বলেন, এতো হামলা ও নির্যাতন মেনে নেওয়ার মতো নয়। তারপরও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের শালিসী সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখনও আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না। এটা খুবই দুঃখজনক।

তবে এইসব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করেছেন, বাবা সুলতান ও ফেরদৌসের চাচা জাকির হোসেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকায় ওই ৭ পরিবার নিজেরাই দুর্বল। তাই লোক লজ্জার ভয়ে তারা গ্রামে থাকেনা। তাদের গ্রামে আসতে কেউ বাধা দিচ্ছেনা। মনের দুর্বলতা থাকায় তারা নিজেরাই গ্রামে আসছেনা। সালিশ বৈঠকে পক্ষপাতিত্ব হওয়ায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, তারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা করেছেন। সালিশে উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে একটি পক্ষ সালিশে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে আবারও সালিশ বৈঠকের আবেদন করেছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান দেশের বাহিরে থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এখনও গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে বলে জানান তিনি।উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবীর উদ্দিন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজার রাখার স্বার্থে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি সুরাহ করা হয়। উভয় পক্ষই সহ অবস্থানে বসবাসের অঙ্গিকার করে। কিন্তু এখন এক পক্ষ সালিশ মানছেনা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আইনগতভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনও সমঝোতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নেয়ামুল আলম বলেন, পরবিারগুলো গ্রামে ফিরতে পারেনি, এ মর্মে পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।