প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু গ্যাসও দিতে পারেনি, দেশের উন্নয়নও করতে পারেনি। আমি আগেই বলেছি, মুচলেকা দিয়ে বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে চাই না।শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সংবর্ধনা উৎসর্গ করছি বাংলার মানুষকে।

একটি মহল নৌকা ঠেকাতে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকা কেন ঠেকাতে হবে? নৌকার অপরাধ কি? সামনে শ্রাবণ মাস।বর্ষার সময়, বন্যার সময়। নৌকা তো লাগবে। যেসব রাজনীতিকরা নৌকা ঠেকাতে নেমেছেন তাদের বন্যার সময় রিলিফ বিতরণ করতে ও চলাচল করতেও তো নৌকাই লাগবে। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে জনগণ ভাষার অধিকার পেয়েছে। দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে নাম লিখিয়েছে। পারমাণবিক ও স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে। আমার প্রশ্ন নৌকা ঠেকিয়ে কি রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় আনবেন? যারা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাদের মুখে একথা মানায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এনেছি। স্থানীয় ও জাতীয়সহ এ পর্যন্ত যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। গণতন্ত্র যদি না থাকে তবে জনগণ ভোট দিয়েছে কিভাবে?আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবে তা আমি বরদাস্ত করবো না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।এগিয়ে যাওয়ার ধারা আমরা যাতে অব্যাহত রাখতে পারি।তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করায় একটি মহল সমালোচনায় মেতেছে। যারা এটাকে সন্দেহের চোখে দেখে, সমালোচনা করে তাদের সম্পর্কে আমার মনে হয়, তারা দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্ব শিকার করে না।বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন,আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে অনেকগুলো গণমুখী কাজ শুরু করি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার তা শুরু করি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের উন্নয়ন।আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আজকে গণসংবর্ধনার কোনও প্রয়োজন নেই। সংবর্ধনা উৎসর্গ করছি বাংলাদেশের মানুষকে। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা, সুন্দর জীবন উপহার দেওয়া। সেটা শুধু বিত্তশালীদের জন্যই নয়। একেবারে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের উন্নতি।’ বলেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন,আমার রাজনীতি বঞ্চিত মানুষের জন্য। যেদিন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবো। সেদিন নিজেকে স্বার্থক মনে করবো।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের জন্য মাত্র ৫ ঘন্টা সময় ব্যয় করি। কোনও উৎসবে আমি যাই না। প্রতিটি মুহূর্ত কাজ করি দেশের মানুষের জন্য । মৃত্যুভয় আমি করি না। মৃত্যুর আগে মরতেও রাজি নই। যতক্ষণ জীবন আছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যবো। যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি। বেহেস্ত থেকে আমার বাবা তা দেখবে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছি। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। কারণ নির্বাচন ঠেকাতে পারলে আবার অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা বিএনপির এসব জ্বালাও পোড়াও ঠেকিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্তিত করেছে। আবার বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা এ দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু বিএনপি আবার মাঝ পথে সেটিকে বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা দ্বিতীয় দফায় আবার ক্ষমতায় আসে। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই আমাদের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়। শেখ হাসিনা আরো বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অথচ এই খুনিরা দম্ভভরে বলেছিল তারা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের আগে বাঙালি ছিল বীরের জাতি। আর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই বাঙালি হলো খুনি জাতি। কলকাতায় আমরা যে বাসায় ছিলাম সেখানে এক কাপড় বিক্রেতা আসতেন তিনি আমাদের বললেন আপনারা কীসের জাতি? যিনি আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তাকে হত্যা করল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সম্মান হারিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ পরবর্তী ক্ষমতাভোগীরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যস্ত ছিল। তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে কোনো কাজ করনি। কিছু সুবিধাভোগির জীবন উন্নত হয়েছে কিন্তু বাংলার মানুষের ভগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমাকে ৭৫ পরবর্তী অনেক ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু পিছপা হইনি। জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছি। কিন্তু জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ভারতের আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি অর্জন, মহাকাশে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পাঠানো, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে গে¬াবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করা, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া এবং দেশের উন্নয়ন ও অর্জনে অনন্য সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মানপত্র পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রবীণ নেতা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বিশাল গণসংবর্ধণায় দলের নেতারা বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে সভামঞ্চে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। নৃত্য, শেখ হাসিনা নিয়ে গান, কবিতা আবৃত্তি করা হয়। গানের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়।