চলতি মাসের (জুলাই) শুরুতে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম এখনও চড়া। রাজধানীর বাজারভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায় কেজিতে। তবে বেশিরভাগ সবজিই ৩০ টাকা মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা এবং শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।গত কয়েকদিন ধরে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে মরিচের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে বাড়তে পারে অন্যান্য সবজির দামও।শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাকা ও মানভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারে ১০০-১২০ টাকা, রামপুরায় ১৪০-১৬০ টাকা, সেগুনবাগিচায় ১৩০-১৪০ টাকা এবং যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ীরা ১১০-১২০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন। আগের সপ্তাহেও ব্যবসায়ীরা একই দামেই বিক্রি করেছেন বলে জানান তারা।

কাঁচা মরিচের চড়া দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বলেন, বাজারে এখন কাঁচা মরিচের সরবরাহ তুলনামূলক কম। যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে মরিচের সরবরাহ আরও কমে যেতে পারে। কারণ, বৃষ্টির পানিতে খেতে কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়ে যায়।যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী খায়রুল মিয়া বলেন, কাঁচা মরিচের দাম সহসা কমার সম্ভাবনা নেই। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক চাষীর খেতে মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সামনে দাম তো কমবেই না বরং আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়া বাজারে পটল, ঝিঙা, ধুনদল, চিচিংগা, বেগুন, কাকরল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, পেপে, করলাসহ প্রায় সব সবজিই ভরপুর। এসব সবজি ৩০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজার ভেদে সবজির দামের পার্থক্য রয়েছে। কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, হাজিপাড়া, যাত্রাবাড়ীর বেশিরভাগ বাজারে চিচিংগা, পটল, ঝিঙা, ধুনদল, কাকরল, করলা, পেপে বক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। তবে সেগুনবাগিচা বাজরে এসব সবজি ৪০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।সবজির মধ্যে বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো এবং বরবটি। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে টমেটোর দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা কেজি। সে হিসাবে বাজারে পাকা টমেটোর দাম কিছুটা বেড়েছে।

যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাজারে এখন সব সবজির সরবরাহ ভরপুর। যে কারণে দাম কিছুটা কম। তবে সামনে সবজির দাম বাড়তে পারে। কারণ, বৃষ্টি হলে খেতে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে অনেক সবজি খেতে নষ্ট হয়েছে।কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. জয়নুল বলেন, অনেক দিন ধরেই বাজারে বেশিরভাগ সবজি ৩০-৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে যেতে পারে -এমন আশঙ্কায় অনেক চাষী খেতের ফলস তুলে ফেলছেন। ফলে সামনে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে,চট্টগ্রাম নগরের কাঁচাবাজারে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। অপরদিকে এক কেজি গাজরের দাম ১০০ টাকা। দেড় কেজি গাজরের দামে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যাবে। এদিকে নতুন করে আসতে শুরু করা কাঁকরোলের দামও চড়া। কেজিতে এ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।শুক্রবার দুপুরে নগরের চকবাজার ও কাজীর দেউড়ি বাজারে দেখা যায় আলু ও মরিচ ছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি।ব্যবসায়ীরা জানান, গাজরের সরবরাহ বাজারে কম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এ সবজির দাম বাড়তি। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি থেকে নতুন করে আসতে শুরু করেছে কাঁকরোল ও বরবটি। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, তিতকরলা ৪০, ঢ্যাঁড়স ৩০, বেগুন ৪০, পটল ৩০, কচুর ছড়া ৪০, আলু ২৫, মরিচ ৩৫ ও ঝিঙে ৩০ টাকা।চকবাজার কাঁচাবাজারের দোকানি আবুল কালাম বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে, তাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে চাষিরা। মাকসুদুল আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরের পক্ষ থেকে মনিটারিং ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। এটির সুষ্ঠু সমাধান করা দরকার। যাতে করে সবজির দাম বিশেষ করে গরিব দুঃখী খেটে খাওয়া মানুষের নাগালের মধ্যে আসে।মাছের বাজারে দাম একটু কমেছে। প্রতিকেজি ইলিশ (মাঝারি আকার) ৪০০ টাকা, বড় ইলিশ ১২০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৪০০ টাকা, বড় চিংড়ি ১৪০০ টাকা, রুই মাছ ২৫০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, লইট্টা মাছ ১৪০ টাকা, কাতলা ৩০০ টাকা, বাটা মাছ ৪০০ টাকা, কোরাল মাছ ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। গরুর রান কাটা মাংস কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, হাড্ডিসহ ৫০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকা।কাজীর দেউড়ি বাজারের ক্রেতা নাজমুল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে মাংসের দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহে ১৪০ টাকায় কিনেছিলাম। এ সপ্তাহে ১৫০ টাকা। একই অবস্থা অন্যান্য মুরগির ক্ষেত্রেও। গরু ও খাসির মাংসের দামও ৫০ টাকা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন।গরুর মাংসের দোকানি সালমান হোসেন বলেন, সামনে কোরবান, গরু বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই এ সপ্তাহে ৫০ টাকা বেড়েছে।