দীর্ঘ দিন থেকে তাবলিগ-জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে এ দ্বন্দ্ব নিরসনে এবার মাঠে নেমেছেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী। এ লক্ষ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তাবলিগ জামাতে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধীদের ওয়াজাহাতি জোড়ের (পরামর্শ সভা) আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী। এ সভায় যোগদান করে সাদ বিরোধীদের সমর্থন দেন তিনি। সমাবেশে তাবলিগ ও হেফাজতপন্থী কওমি আলেমরা অংশ নেন। সমাবেশে আলেমদের পক্ষ থেকে ৬টি সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান মাওলানা মাহফুজুল হক। এগুলো হলো-

১. জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন। তিনটি মৌলিক কারণে- (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তাবলিগ ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা। (গ) পূর্ববর্তী তিন হযরতি (হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), হযরত মাওলানা ইউসুফ (রহ.) ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।

২. মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হযরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) এর রেখে যাওয়া শুরায়ি নেযামকে উপক্ষো করে নিজেই নিজেকে আমির দাবি করেছেন। যা শরিয়ত বিরোধী। তাই তার কোরোরূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না।

৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনও ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনও জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না।

অনুরূপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনও জামাতকে বাংলাদেশের কোনও জেলায়/থানায় ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

৪. হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), হযরত মাওলানা ইউসুফ (রহ.) ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে।

তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হযরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনও পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সব মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।

৫. কাকরাইল মসজিদের যেসব শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন যা শরিয়ত পরিপন্থী তারা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব, তাদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে ।

৬. ২০১৮-এ টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ- প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারির সঙ্গে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।