স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১- এর সফল উৎক্ষেপণ উদযাপন এবং জয়দেবপুর ও বেতবুনিয়ায় ‘সজীব ওয়াজেদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

স্যাটেলাইট উক্ষেপণের কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, গর্বেরও তো একটা বিষয় আছে। সারা বিশ্বের সামনে আমরা আরেকটি কারণে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা বিশ্বের সামনে বারবার বিভিন্ন কারণে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পেরেছি।বিএনপি-জামায়াতের শাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বলা হত, জঙ্গিবাদী দেশ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং এটা পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে’ বলে পরিচিত দেওয়া হতো। সেখান থেকে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে একেকটি বিষয় নিয়ে… শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরস্কার পেয়ে (বাংলাদেশ) এখন দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম অগ্রগামী দেশ হিসেবে পরিচয় পায়। মে মাসে প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ।

৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করাটা গর্বের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন জয়।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জয়দেবপুর ও বেতবুনিয়ায় ‘সজীব ওয়াজেদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের’ উদ্বোধন করেন। বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধুর সময় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র স্থাপনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুজিব থেকে যাত্রা শুরু, সজীবের কাছে আমরা পৌঁছেছি।বঙ্গবন্ধু এই ভূউপগ্রহ কেন্দ্র দিয়ে গেছেন। আর সজীব ওয়াজেদের পরামর্শেই আমরা মহাকাশে পৌঁছেছি। কাজেই মুজিব থেকে সজীব।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর পেছনের কথাও তুলে ধরেন সজীব ওয়াজেদ।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম আমাকে প্রথম উপদেষ্টা বানালেন, স্যাটেলাইটের আলোচনা সবার মাথায়ই ছিল, তখন তিনি আমাকে বললেন, পারলে তুমি করে ফেল। তখন আমি নিজেও একটু থতমত খেয়ে গেলাম। কারণ আমরা আইসিটি নিয়ে কাজ করছি। স্যাটেলাইট লঞ্চ করতে হবে; আর সেটা যে আমার করতে হবে ভাবিনি।তখন বিটিআরসিকে নিয়ে পরিকল্পনা করলাম। পরামর্শক নিয়োগ করলাম। প্রথম থেকেই পরিকল্পনা ছিল। আমরা এটা করবো নিজস্ব অর্থায়নে। বিশ্বব্যাংক বা বিদেশের কারো কাছে হাত পেতে থাকবো না।জয় বলেন, আমি খুব গর্ব করে বলতে পারি যে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এটা করেছি।এটা বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প হওয়ায় নির্ধারিত বাজেট ও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল বলে জানান তিনি।আমার লক্ষ্য ছিল সময় এবং বাজেটের মধ্যে করতে হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে লঞ্চ করতে হবে। এই স্যাটেলাইট বাজেটের কমেই হয়েছে। সরকারি টাকা আরো বাঁচিয়ে দিয়েছি আমরা।

তবে ফ্লোরিডায় ঘুর্ণিঝড় হওয়ায় উৎক্ষেপণ কিছুদিন পিছিয়ে গেলেও সময়ের আগেই হয়েছে বলে জানান তিনি।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশে সকল মানুষের কাছে আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেব। সেজন্য আমরা অনেক বছর আগেই পরিকল্পনা নেই।তবে অনেক ইউনিয়ন আছে, অনেক দ্বীপ আছে যেখানে ব্রডব্যান্ড নেওয়া সম্ভব না। তাই আমরা পরিকল্পনা করেছি, বঙ্গবন্থু স্যাটেলাইট দিয়ে আমরা সেখানে ব্রডব্যান্ড দেব। যেহেতু স্যাটেলাইট মহাকাশে চলে গেছে, তাই এটা স্বল্প সময়ে দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।জয় বলেন, আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রাম-শহরের সব মানুষের সংযোগ ঘটাতে হবে। আর এক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ভূমিকা রাখবে।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উদ্দ্যেশ্যই হল, এটার মাধ্যমে সরাসরি স্যাটেলাইট টেলিভিশন সার্ভিস দেশের মানুষকে দিতে পারব, যেটাকে বলে ডিটিএইচ। আমরা এটার লাইসেন্সও দিয়েছি।শুধু দেশি চ্যানেল না, সারা বিশ্বের গান, নাটক যেন দেখতে পারে। সারা বিশ্বকে আমাদের দেশের মানুষ যেন দেখতে পারে। আমরা যেন কোনও দেশ থেকে পিছিয়ে না থাকি। আমরা একটা ‘ক্লোজড দেশে চোখ বন্ধ’ করে থাকতে চাই না।
স্যাটেলাইট সেবার মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বৈষম্য’ দূর হবে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুর নাতি বলেন, শুধু শহরের মানুষ এগিয়ে যাবে যাবে, গ্রামের মানুষ পিছিয়ে থাকবে- এটা আমি চাই না।এর বাইরেও আরো অনেক কিছু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সরকারি ও বেসরকারি সার্ভিস বিশেষ করে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেগুলো বিদেশি স্যাটেলাইট থেকে এই সার্ভিসগুলো নেয়। প্রত্যেক বছর কোটি কোটি টাকা বিদেশি স্যাটেলাইটগুলোকে দিতে হয়।এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকেই দেওয়া যাবে। এর ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে চাপ পড়বে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের যে খরচ সেটাও ভাড়া থেকে উঠে আসবে। এটা মুনাফা করবে।সজীব ওয়াজেদ বলেন, তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি লাভ আছে। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্যাটেলাইট, স্পেস টেকনোলজির প্রতি নজর এসেছে। আমার আশা আছে, কিছু ছাত্র-ছাত্রী এখন এটার ওপর শিক্ষা নেবে।স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য আমাদের তরুণ-তরুণীদের প্রয়োজন হবে। এর ফলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ওপর দক্ষতা গড়ে উঠবে।ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বক্তব্য দেন।