জাপানিদের জনপ্রিয় খাবার স্প্রাউট স্যুপ। যা তৈরী হয় মুগ ডাল থেকে। আর এ মুগডাল রপ্তানি হচ্ছে পটুয়াখালী অঞ্চল থেকে। ফলে মুগ ডাল রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালি হচ্ছে, তেমনি অর্থনৈতিক এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য,দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭৫ ভাগ মুগডালই উৎপাদিত হয় পটুয়াখালীতে।

জাপানে মুগডালের ব্যপক চাহিদা থাকায়, ২০১৬ সাল থেকে গ্রামীন ইউগ্লেনা নামক একটি প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি মুগডাল ক্রয় করে জাপানে রপ্তানী করা শুরু করে। জাপানিরা সাধারনত ৩.৫ মিমি এর বড় আকারের মুগডাল দিয়েই স্যুপ তৈরী করে। তাই বারি মুগ-৬ সহ অন্যান্য যে সকল মুগের দানার আকার ৩.৫ মিমি এর উপরে এবং রং উজ্জল সবুজ গ্রামীন ইউগ্লেনা সেই সকল বারি এবং বিনা জাতের ডালই ক্রয় করে। তবে পটুয়াখালী অঞ্চলের কৃষকরা একটা সময় স্থানীয় জাতের ছোট দানার ডাল চাষ করলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং কারিগরি সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এর ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলায় বাজারমুখী কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদেরকে দিয়ে বারি মুগ-৬ জাতের ডাল চাষ করছে।

ব্লু গোল্ড এর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, উন্নত জাত এবং প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে মুগ ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি শক্তিশালী বাজার সংযোগ তৈরীতে কৃষকদেরকে সহায়তা করা। যাতে কৃষকরা বিক্রির নিশ্চয়তাসহ মুগডাল চাষকে একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিনত করতে পারে। ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত কোম্পানীটি পটুয়াখালী সদর, দশমিনা এবং গলাচিপা উপজেলার ৩৯টি উৎপাদক দলের ১৭৫২ জন কৃষকের কাছ থেকে মোট ২৫৬.৩০ মেট্রিক টন মুগডাল ক্রয় করে। যার মোট মূল্য ১,৪৬,০৯,১০০ টাকা। এবছর কোম্পানীটি কৃষকদেরকে প্রতি কেজিতে স্থানীয় বাজারের তুলনায় ১৭ টাকা বেশী দর দেয়। ফলে কৃষকরা ভাল মানের মুগডাল সরবরাহ করে অতিরিক্ত ৪,৩৫,৭,১০০ টাকা বাড়তি আয় করতে সক্ষম হয়।

কৃষি বিভাগের নানা কর্যক্রমের পাশাপাশি ব্লু গোল্ড এবং গ্রামীন ইউগ্লেনার কিছু সুনিদির্ষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে মুগডাল এর বাজার ব্যবস্থা অনেকটা শক্তিশালী হওয়ার ফলে উন্নত জাতের মুগডাল চাষের প্রতি আগ্রহ ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষনীয় যে, ২০১৫ সালে পটুয়াখালী অঞ্চলে যেখানে মুগ চাষের উপযোগী জমির মাত্র ১০-১৫ ভাগ জমিতে উন্নত জাতের মুগডাল চাষ হত বর্তমানে সেখানে ৭০-৮০ ভাগ জমিতে বারি মুগ-৬ সহ অন্যান্য উন্নত জাতের মুগডাল চাষ হচ্ছে।

স্থানীয় জাতের তুলনায় উন্নত জাতের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুন হওয়ায় পূর্বের তুলনায় দেশে মুগডালের ফলন দ্বিগুন হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয় জাত এবং উন্নত জাতের মুগের দাম প্রায় একই হওয়ায় কৃষকরাও বর্তমানে দ্বিগুন লাভ পাচ্ছে। মুগডালের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন দেশের মানুষের উদ্ভিজ্জ আমিষের চাহিদা পূরন হচ্ছে পাশাপাশি গ্রামীন ইউগ্লেনার মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশীক মূদ্রা অর্জিত হচ্ছে। যা দেশের অর্থনৈতিক এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখছে।