যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন নিয়ে এখানে মজায় খেলবে দল। মাঠে সেই মজা জমল ভালোই। দারুণ ব্যাটিং বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন সাকিব। তামিম ইকবাল খেললেন দুর্দান্ত ইনিংস। শেষ দিকে স্নায়ুর চাপে জিতলেন বোলাররা। জিতল বাংলাদেশ।

সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ফ্লোরিডার লডারহিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সমতা ফিরিয়েছে তিন ম্যাচের সিরিজে।বাংলাদেশ সময় রোববার ভোরে শুরু হওয়া ম্যাচে ২০ ওভারে বাংলাদেশ করেছিল ১৭১ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ করতে পেরেছে ১৫৯।মার্চে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল থেকে টানা পাঁচটি ম্যাচ হারার পর টি-টোয়েন্টিতে জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ।শুরুতে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশক উদ্ধার করেছে তামিম ও সাকিবের ৫০ বলে ৯০ রানের জুটি। ৪৪ বলে ৭৪ করেছেন তামিম, ৩৮ বলে ৬০ সাকিব।

সাকিব পরে বল হাতে ৪ ওভারে ১৯ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। আরেক স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু নিয়েছেন ৩টি। খরুচে হলেও গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ।টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ বদল এনেছিল ব্যাটিং অর্ডারে। তবে বদলায়নি টপ অর্ডারের চিত্র।প্রথম ম্যাচে দুই বাঁহাতি ওপেনারকে প্রথম ওভারেই ফিরিয়েছিলেন অ্যাশলি নার্স। তাকে এড়াতে এদিন তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন লিটন দাস। স্ট্রাইকও নেন লিটন, টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার নন-স্ট্রাইকে শুরু করেন তামিম।

বাংলাদেশের এই বদলে কৌশল বদলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও। ডানহাতি লিটনের জন্য বোলিং শুরু করে তারা লেগ স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রিকে দিয়ে।তবে নার্স আক্রমণে আসেন দ্বিতীয় ওভারেই এবং আবারও নাড়িয়ে দেন বাংলাদেশকে। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন লিটন দাস।ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় ধরে রাখতে তিনে নামানো হয় মুশফিকুর রহিমকে। তিনিও নার্সকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন সুইচ হিট খেলতে গিয়ে।আরেক পাশে তামিম দারুণ খেললেও অন্য পাশে আসেনি তেমন রান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান আসে কেবল ৩৫।

সৌম্য সময় নিয়েছেন, কিন্তু রানে ফিরতে ব্যর্থ এদিনও। ১৮ বলে ১৪ করে বিদায় নেন কিমো পলের স্লোয়ারে। অষ্টম ওভারে তখন বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৪৮।এই তিন উইকেটের মাঝে তামিম খেলেছেন দুর্দান্ত। নার্সকে প্রথম ওভারে মেরেছেন দুটি চার। বদ্রির দ্বিতীয় ওভারে বাউন্ডারির পর চোখধাঁধানো শটে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কা। সৌম্যকে আউট করা পলের ওভারেও মেরেছেন দুটি বাউন্ডারি।ইনিংস নতুন গতি পায় সাকিব নামার পর। টানা দুই বলে মারেন বাউন্ডারি। কেসরিক উইলিয়ামসের এক ওভারে তিনটি।কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের বলে তামিমের দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারিতে জুটির ফিফটি আসে ৩৩ বলে। দলের রানও স্পর্শ করে তিন অঙ্ক। ওই ওভারেই রভম্যান পাওয়েলকে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তামিম ৪৭ রানে। সেটির মূল্য দিতে হয় ক্যারিবিয়ানদের।৩৫ বলে তামিম স্পর্শ করেন ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি ফিফটি। এর পর পেয়ে বসেন আন্দ্রে রাসেলকে। পাঁচ বলের মধ্যে মারেন দুর্দান্ত তিনটি ছক্কা, এক চার। ওভারের শেষ বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ দেন সীমানায়। নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছে আধ ডজন চার ও চারটি ছক্কায় ৭৪।সাকিব ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি স্পর্শ করেন ৩০ বলে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের ১৬ ইনিংস পর আবার পেলেন টি-টোয়েন্টি ফিফটি। অধিনায়ক হিসেবে ১৩ ম্যাচে তার প্রথম।৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬০ রান করে সাকিব ফিরেছেন শেষ ওভারে। তামিমের বিদায়ের পর শেষ ৪ ওভারে ওঠেনি প্রত্যাশিত ঝড়। মাহমুদউল্লাহ করেছেন ১০ বলে অপরাজিত ১৩।সাকিব-তামিমে উজ্জ্বীবিত দল বোলিংয়ের শুরুটাও করে ভালো। আবু হায়দার রনির নিয়ন্ত্রিত প্রথম ওভারে শুরু। দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজ শুরু করেছিলেন টানা তিনটি ওয়াইডে। কিন্তু সেই ওভারেই দলকে এনে দেন বিপজ্জনক এভিন লুইসের উইকেট।তিনে নামা আন্দ্রে রাসেল সহজাত ব্যাটিংয়ে তোলেন ঝড়। তবে চার-ছক্কা হজমের পর দারুণ বাউন্সারে রাসেলকে (১০ বলে ১৭) ফেরান সেই মুস্তাফিজই।

মারলন স্যামুয়েলস শুরু করেছিলেন প্রথম দুই বলে চার ও ছয়ে। তৃতীয় বলে একই চেষ্টায় বিদায়। সাকিবের বলে সীমানা দারুণ ক্যাচ নেন লিটন দাস। ৫ ওভারে রান ওঠে ৪৮, কিন্তু নেই ততক্ষণে ৩ উইকেট।উইকেট পতনে একটু কমে রানের গতি। দিনেশ রামদিনকে ফেরান রুবেল। ৮ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে ৬০।ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার টিকে তখনও। রভম্যান পাওয়েলের সঙ্গে জুটিতে এগিয়ে নেন দলকে। পঞ্চম উইকেটে দুজন গড়েন ৫৮ রানের জুটি।৩৬ রনে সীমানায় ফ্লেচারের ক্যাচ ছাড়েন আরিফুল হক। আগের তিন ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা আবু হায়দারের ওই ওভারে দুটি ছক্কা মারেন পাওয়েল।জমে ওঠা এই জুটি ভাঙেন নাজমুল ইসলাম। ৩৮ বলে ৪৩ রান করা ফ্লেচারের ক্যাচ নেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক পরে বল হাতে ফেরান কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে। সীমানায় আরেকটি অসাধারণ ক্যাচ নেন লিটন।তখনও বাধা হয়েছিলেন পাওয়েল। ৩৭ রানে তার ক্যাচ ছাড়েন সাকিব। ৩৪ বলে ৪৩ রান করা ব্যাটসম্যানকে শেষের আগের ওভারে মুস্তাফিজ ফেরান বাউন্সারে। উইকেটের পেছনে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুশফিক।ওই ওভারের শেষ দুই বলে নার্সের চার ও ছক্কায় আবার আশা জাগে ক্যারিবিয়ানদের। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপু দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।শেষে এসে অনেকবার গুবলেট পাকানো দল এবার মাঠ ছাড়ে জয়ের স্বস্তিতে। উচ্ছ্বাসে ভাসে গ্যালারি ভরিয়ে সমর্থন দিতে আসা বাংলাদেশি দর্শকরাও।