গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আট আসামির বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পলাতক দুইজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জানি করেছে আদালত।ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান বুধবার এই আদেশ দেন।

দুই পলাতক আসামি শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে গ্রেপ্তার করা গেল কি না-তা জানিয়ে আগামী ১৬ অগাস্ট পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন তিনি।পাশাপাশি অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ অনুযায়ী এ মামলায় দুই বছর ধরে কারাবন্দি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে গত ২৩ জুলাই তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির।অভিযোগপত্রে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে অস্থিতিশীল করা, বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।জীবিত আট আসামির মধ্যে যে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তারা হলেন-জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর।চিহ্নিত বাকি ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। গ্রেপ্তার ছয় আসামির মধ্যে বুধবার জাহাঙ্গীর ছাড়া সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়। জাহাঙ্গীরকে কেন আনা হয়নি সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা জানতে চান বিচারক।তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পিপি মো. গোলাম সারোয়ার খান জাকির এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার।

গুলশান হামলার দিন সপরিবারে হলি আর্টিজান বেকারিতে ছিলেন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিম। তাদের উদ্ধারের পর সন্দেহ সৃষ্টি হলে হাসনাত করিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।কিন্তু তদন্তে ওই হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বুধবার হাসনাত করিমকে এ মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক। হাসনাত করিমকে বুধবারই যেন মুক্তি দেওয়া হয়- সেই নির্দেশনা দিতে বিচারকের কাছে আর্জি জানান তার আইনজীবী সানোয়ার হোসেন সমাদ্দার।বিচারক বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে ওই নির্দেশনা তিনি দেবেন।সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এ মামলা বিচারের জন্য গত ৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ আইনের মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে মোট ২১১ জনকে। তাদের মধ্যে ১৪৯ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওই ঘটনা সম্পর্কে জানেন বলে পুলিশের ভাষ্য।পাঁচ তরুণের সরাসরি অংশগ্রহণে হলি আর্টিজান বেকারিতে ওই হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ তরুণ-রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহতির অনুমতিপত্র আদালত থেকে কারাগারে গেলেই হাসনাত করিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আদালত থেকে পুলিশ তাকে কারাগারে নিয়ে গেছে।এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার দুলাল বলেন, বিচারক হাসনাত করিমকে অব্যাহতি দিয়েছেন। অব্যাহতির আদেশ কারাগারে পৌঁছালেই কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হবেন।চার্জশিটভুক্ত পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানারও আদেশ দেন বিচারক। পলাতক আসামিরা হলেন শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।কারাগারে থাকা ছয় আসামি হলেন হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি’ নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ।এর আগে গত ৩০ জুলাই মামলার চার্জশিট গ্রহণ ও আসামিদের উপস্থিতির জন্য আজকের (৮ আগস্ট) দিন ধার্য করেন আদালত। গত ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন। এরপর গতকাল ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে ওই ট্রাইব্যুনালে মামলার নথি পৌঁছায়। গত ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলার চার্জশিট সিএমএম আদালতের জিআর শাখায় দাখিল করেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় তাদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।