ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় দু’বছর কারাবন্দি থাকার পর তিনি বৃহষ্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।

হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, আদালতের কাগজপত্র বুধবার রাতে এ কারা পৌঁছে। পরে কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে বৃহষ্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি কারা ফটকের সামনের রাস্তায় অপেক্ষমাণ একটি কালো জীপ গাড়ীতে চড়ে স্বজনদের সঙ্গে দ্রুত কারা এলাকা ত্যাগ করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেন নি।

প্রসঙ্গতঃ গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে নব্য জেএমবি’র কয়েক সশস্ত্র জঙ্গী ঢাকায় গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। জঙ্গীরা হোটেলে অবস্থানরত ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করে। পরদিন কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী পাঁচ তরুণ রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল নিহত হন। হামলার ঘটনার সময় ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিম সপরিবারে হলি আর্টিজান বেকারিতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উদ্ধারের পর সন্দেহ সৃষ্টি হলে পুলিশ হাসনাত করিমকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়।

তদন্তকালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জঙ্গি হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে। এদের মধ্যে বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হয়। জীবিত আট আসামির মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। তারা হলো- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর। অপর দুই আসামী শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন পলাতক রয়েছে।

তদন্ত শেষে গত ২৩ জুলাই জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। চিহ্নিত বাকি ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্তে ওই হামলার সঙ্গে হাসনাত রেজাউল করিমের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বুধবার হাসনাত করিমকে এ মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা প্রায় ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। দেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করা এবং বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো ছিল তাদের উদ্দেশ্য।