সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে সাজা নিশ্চিতের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন সাংবাদিকরা।শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মোল্লা জালাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ১৫ অগাস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং পরদিন ১৬ অগাস্ট সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নেবেন।নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অষ্টম দিনে গত ৫ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধানমন্ডিতে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলার মধ্যে হেলমেট পরা একদল যুবক লাঠি ও কিরিচ নিয়ে হামলা চালায় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর।হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সাংবাদিকরা।
শনিবারের সমাবেশে মোল্লা জালাল বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুবৃর্ত্তদের হামলায় সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন। এরপর সাংবাদিকরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।সাংবাদিকরা কোনো দল করে না, তারা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট না। তারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেন বলে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।এই সংবাদিক নেতা আরও বলেন, আজকে সারাদেশে সাংবাদিক সমাজ বিক্ষোভে নেমেছে। আমাদের দাবি একটাই আমরা নিরাপত্তা চাই। সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তথ্যমন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। সাংবাদিকদের দাবি হামলাকারীদের গ্রেফতার করা।
সাংবাদিক সমাজ এখনই আপনাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ঘৃণা জানাতে চায় না এমন কথা উল্লেখ করে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, সাংবাদিকরা না লিখলে আপনারা বোবা হয়ে যাবেন। সাংবাদিকরা চান না আপনারা বোবা হয়ে যান।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, যত দিন যাচ্ছে আপনারা অদক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। পুলিশের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া।সংগঠনের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, যারা সাংবাদিকদের ওপর নগ্ন হামলা করে নিজেকে আড়াল করছেন তাদের গ্রেপ্তার না করা একটা পরিহাস। এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে সাংবাদিকরা লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে যেতে বাধ্য হবে।বিএফইউজের সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সাংবাদিকরা সময় বেঁধে দিয়েছিলো, সেই সময় অতিক্রম হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে হয় বাসের ধাক্কা খাওয়ার পর, এখনও নড়তে পারছেন না। লাঠি ও হেলমেটধারীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিউজ বর্জন করবো।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, সাংবাদিকদের কাজ করতে দিন, রাজপথে ঠেলে দেবেন না। দুর্বৃত্তরা চিহ্নিত হলে তাদের গ্রেফতার করেন। সরকার সাংবাদিক হামলার বিষয়ে কোনও কাজ করে থাকলে তা দৃশ্যমান করেন। বিএনপি-জামায়াত আমলে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে, তখন বিচার চাইনি। কারণ বিচার পাবো না। কিন্তু আমরা এখন বিচার চাচ্ছি, কারণ বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন সাংবাদিক বান্ধব শেখ হাসিনা সরকার। আমাদের কর্মসূচির কারণে সরকার বিব্রত হলে দায় নিতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।সমাবেশে বিএফইউজে সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মজিদ, কোষাধ্যক্ষ দ্বীপ আজাদ, দপ্তর সম্পাদক বরুন ভৌমিক নয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলও সমাবেশে অংশ নেয়।