সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে সাইবার পেট্রোলিংয়ের কথা জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী। সোমবার (১৩ আগস্ট) পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।আইজিপি বলেন, গত ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিবাদ ছিল যৌক্তিক। তারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, আমরাও তাদের সহায়তা করেছি।পরবর্তীতে অনুপ্রবেশকারীরা হীন উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।৬-৭ আগস্ট থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কঠোর হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ভালো কাজ হয়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি সহজ গুজব ছড়ানো। বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে গুজব ছড়ানো কয়েকশ অনলাইন পোস্টদাতাকে আমরা শনাক্ত করেছি। ইতোমধ্যে ২১টি মামলা হয়েছে, সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। গুজব ছড়ানো কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।পুলিশ কাউকে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেবে না।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে সদর দফতরে একটি শক্তিশালী সাইবার মনিটরিং ইউনিট গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের মাধ্যমে নিয়মিত সাইবার পেট্রোলিং করা হবে। এর মাধ্যমে প্রত্যেক জেলা পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রমগুলো মনিটরিং করা হবে।এ সময় আইজিপি সবাইকে গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে শান্তিপূর্ণ দেশকে অশান্ত না করার আহ্বান জানান।ছাত্র আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের এখনও খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি পুলিশের ব্যর্থতা মনে করছি না। একদিনেই পুলিশ সব পারবে বিষয়টি তা নয়, কখনও এক ঘণ্টায় হয়, আবার কখনও একটু সময় লাগে।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে ডিএমপিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনারকে প্রধান করে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করছে। আশা করছি, অচিরেই আমরা হামলাকারীদের শনাক্ত করে তাদের তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হবো।অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমরা ফেসবুকের ফেক আইডিগুলো শনাক্ত করছি। কিছু আইডি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু যে কোনো নামে যেকোন সময় সহজেই আইডিগুলো খোলা যায়। এ বিষয়ে আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বসেছিলাম। তারা কিছু বিষয়ে সহায়তা দিতে সম্মতি দিয়েছে।আমরা আগে থেকেই ফেসবুকের একজন এডমিনিস্ট্রেটর আমাদের দেশে রাখার অনুরোধ করেছিলাম, এখনও বলছি। যাতে পুলিশ কোনো একাউন্টের বিষয়ে অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারে।বিদেশ থেকে আইডি ব্যবহার করে লাইভে এসে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশপ্রধান বলেন, বিদেশে থাকুক আর যেখানেই থাকুক, দেশের আইন-শৃঙ্খলার বিঘœ ঘটলে পুলিশ আইনের প্রয়োগ করবে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা করা হবে।
ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে হেলমেট বাহিনী’ দেখা গেছে, তারা পুলিশের পরিপূরক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের এবং যেকোন পরিস্থিতিতে আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সহযোগিতা করার জন্য আমরা কাউকে আহ্বান জানায়নি। আমরা মনে করি, আমাদের পরিপূরক জনগণ। প্রয়োজন মনে করলে আমরা সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানাব।এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটাকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা মনে করি না। গোয়েন্দারা কাজ করেছে বলেই হামলার ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত করা গেছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মধ্যে যারা পলাতক রয়েছেন তাদের দুইজনের বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি। একজন যুক্তরাষ্ট্রে ও একজন কানাডায় রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি পর্যায়েও যোগাযোগ চলছে। বাকিদের বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ পাকিস্তান, লিবিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন বলে শোনা গেছে। এ থেকে বোঝা যায় তারা অবস্থান পরিবর্তন করছেন। তাদের সম্পর্কেও আমরা খোঁজ রাখছি।ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে না পারে সে জন্য কড়া নজরদারি থাকবে বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী।আইজিপি বলেন, মহাসড়কে যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে না পারে তা আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করব। মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রাস্তায় থাকবেন, তারা নিয়মিত সড়ক পরিদর্শনে যাবেন।যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অজ্ঞান ও মলম’ পার্টির বিরুদ্ধে গত ঈদ থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, যে কারণে কোন অভিযোগ আসেনি।তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে, রাস্তায় অপরিচিত কারো দেওয়া কোনো কিছু গ্রহণ করা যাবে না।ঈদে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষদের বাড়ি-ঘরের নিরাপত্তার জন্য মহানগরে পুলিশের টহল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান।