নিবন্ধন করার পরও হজের ভিসার জন্য আবেদন না করায় এ বছর হজে যেতে পারছেন না ৬০৬ জন।বুধবার সকালে রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্পে শেষ হজ ফ্লাইট উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান এ তথ্য জানান।চলতি বছর হজযাত্রার শুরউ থেকে অভাব আর অভিযোগের যেনো অন্ত ছিলো না। একদিকে মুনাফালোভী এজেন্সিগুলোর কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় হজযাত্রীদের। অন্যদিকে পর্যাপ্ত হজযাত্রী না পেয়ে ২০টি হজ ফ্লাইট বাতিল করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এতে ৮ হাজার যাত্রীর ক্যাপাসিটি লস হওয়ার দাবি করে বিমান।

অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে ৬০৬ জন এ বছর হজ পালনে যেতে পারছেন না। আর হজ এজেন্সিদের সংগঠন হাব বলছে ওইসব ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এবার হজে যাচ্ছেন না। যদিও হাবের কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি।এদিকে বুধবার (১৫ আগস্ট) শেষ হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের হজযাত্রা কার্যক্রম। তবে যাত্রী অবশিষ্ট থাকা সাপেক্ষে সৌদি এয়ারলাইনসের হজযাত্রী পরিবহন চলবে শুক্রবার (১৭ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত। এজন্য তারা স্লট ফাঁকা রেখেছে। বুধবার এই দুই এয়ারলাইনসের মোট ৯টি ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন চলছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩টি ও সৌদি এয়ারলাইনসের ৬টি ফ্লাইট।চলতি বছরের হজ কার্যক্রম নিয়ে বুধবার হজ অফিসে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, ২০১৮ সালের কোটা অনুসারে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন যাত্রী যাওয়ার কথা ছিলো। তবে অসুস্থ, মারা যাওয়া ও এজেন্সির গাফলতির কারণে ভিসার জন্য ৬০৬ জন আবেদন করেননি। এজেন্সিগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে সব বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করেছি। যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘœ করতে তদারকি করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এবার হজযাত্রা ভালো হওয়ার দাবি করেন মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ধর্মসচিব মো. আনিসুর রহমান বলেন, দু’একটি অভিযোগ পেয়েছি। হজ পালন শেষে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে এ ধরনের অভিযোগ যেনো না আসে সে বিষয়ে আমরা সর্তক থাকবো। আশা করি সৌদি আরবের কার্যক্রমও ভালোভাবে শেষ করতে পারবো।সার্বিক বিষয়ে হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, সব জায়গাতে দুষ্টুলোক থাকে। আমাদের এজেন্সিদের মধ্যেও ছিলো। তবে অভিযুক্ত সব এজেন্সিকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।বিমানের হজ ফ্লাইটের বিষয়ে এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, এবার হজযাত্রী না পেয়ে ২০টি হজফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান। এতে বিমানের ক্যাপাসিটি লস হয়েছে ৮ হাজার যাত্রীর।

যাত্রী স্বল্পতায় কয়েকটি হজ ফ্লাইট বাতিলের পর চলতি মাসের শুরুতে কিছু শর্ত দিয়ে হজযাত্রী প্রতিস্থাপন আট শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় সরকার।ধর্মমন্ত্রী বলেন, ১০ হাজার ৯৪২ জনের প্রতিস্থাপন করার আবেদনের বিপরীতে ১০ হাজার ৭৭৪ জনকে প্রতিস্থাপন করেছি।৬০৬ জন নিবন্ধন করার পরও ভিসার জন্য আবেদন না করায় এই সংখ্যা যেতে পারছে না।

গুরুতর অসুস্থ, মৃত্যুজনিত কারণে অনেকে নিবন্ধন করার পরও হজে যেতে পারেন না। সেটা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়।হজ এজেন্সিগুলোর অবহেলা আর অনাগ্রহের কারণে টিকেট অবিক্রিত থাকা ও ভিসা নিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফিরে এসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত এক লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বাকিরা ১৭ অগাস্টের মধ্যে সৌদি পৌঁছাবেন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অসুস্থতা ও মৃত্যুজনিত কারণ ছাড়াও আর্থিক লেনদেন নিয়ে এজেন্সিগুলোর সাথে বনিবনা না হওয়ায় এজেন্সিগুলো ভিসার জন্য আবেদন করেনি।ভিসার জন্য আবেদন না করলে মন্ত্রণালয়ের করার কিছু থাকে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এবছর ভিসার আগেই সব এজেন্সিকে নিজ নিজ যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম উপস্থিত ছিলেন।গত ১০ অগাস্ট হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, নিবন্ধন করলেও ভিসা জটিলতা, অসুস্থতা এবং ব্যক্তিগত কারণে’ বাংলাদেশ থেকে এবার ৬২৭ জন হজে যেতে পারছেন না।গত ১৪ জুলাই শুরু হয় হজ ফ্লাইট। ২৭ অগাস্ট হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর তা শেষ হবে।