হাসপাতাল পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশিয় দাতা খুঁজছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডায়ারিয়া হাসপাতাল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি)। আইসিডিডিআর,বি’র পরিচালক (কমিউনিকেশন) ক্যাথরিন স্পেন্সার বলেন, আইসিডিডিআর,বি মূলতো একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীদের মহাখালী ও মতলব হাসপাতালের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এই চিকিৎসাব্যয় নির্বাহ হয় ব্যক্তি পর্যায়ের অনুদান, কিছু বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং প্রধান প্রধান দাতাদের অর্থায়নে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ওষুধের দাম বৃদ্ধি, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদেশি দাতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় হাসপাতাল পরিচালনায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।

১৯৬০ সালে গোড়াপত্তন হওয়া এই সংস্থার নাম রাখা হয়েছিল ‘পাকিস্তান কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি’। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর নাম হয় কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি। ১৯৭৮ সালে সরকার জাতীয় সংসদের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে একে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখনই এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম দেয়া হয়।

মহাখালী ও চাঁদপুরস্থ মতলবের হাসপাতালে প্রতিবছর গড়ে দুই লাখের বেশি গরিব রোগী পায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। আর এই চিকিৎসা দিতে বছরে তাদের ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়। চিকিৎসা পরিচালনা করা হয় সারা বছর। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য এই বিশেষ সেবা অব্যাহত রাখতে দেশের আগ্রহী অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি অর্থ সহায়তার আবেদন জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। কেউ দান করলে তার জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা।

এ সম্পর্কে আইসিডিডিআরবির কমিউনিকেশন্স বিভাগের কর্মকর্তা তারিফুল ইসলাম খান এ প্রতিবেদককে জানান, আইসিডিডিআর,বিতে অর্থদান করলে দানের অংক ভেদে সর্বনি¤œ ১০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কর মওকুফ সুবিধা পাবেন দাতা। তিনি প্রবাসি বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসি আছেন, তারা আইসিডিডিআর,বির পাশে দাঁড়ালে সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।

বর্ষা মৌসুমের আগে ও পরে, যখন ডায়ারিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে তখন প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এসময় অতিরিক্ত রোগীর জন্য নতুন কলেরা খাট, সিরাপথে প্রয়োগযোগ্য বাড়তি স্যালাইন, ওআরএস, জিংক ট্যাবলেট, চালের গুঁড়ার স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োজন হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ডাক্তার, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীতো লাগেই। যার জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন পড়ে।

ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশপাশি তীব্র নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের আক্রমণে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে হাসপাতালে। এছাড়া রয়েছে তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশুদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, মা ও শিশুর লং স্টে ওয়ার্ড। দক্ষতার সঙ্গে এসব পরিচালনার জন্য রয়েছেন ৬৫ জন ডাক্তার, ১১০ জন নার্স ও ২৫১ জন সহায়ক কর্মী।

সম্প্রতি ঢাকায়ও ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। এ বছরের মার্চ থেকে মে সময়কালে আইসিডিডিআর,বি-তে ৫৫ হাজার ২২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। যা ২০০৭ সালের পর গড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী এবং সাধারণ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু আইসিডিডিআর,বি ঢাকা হাসপাতালের কর্মীরা কোনো রোগীকে ফিরিয়ে না দেওয়ার’ আদর্শে অবিচল থাকেন। তারা বাড়তি সময় কাজ করেও উচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা বজায় রাখেন। ৩০০ শয্যাসম্পন্ন এ হাসপাতালে রোগী বাড়লে প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত শয্যা যুক্ত করা হয়। সরকারি হাসপাতালের মতো এখন থেকেও কোনো রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।