প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরছে মানুষ।তবে বিভিন্ন রুটের কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যাত্রীদের ভিড় লক্ষণীয়। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে অবস্থান নিচ্ছে।
খুলনাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির পৌনে দুই ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর বিলম্বে ছেড়েছে।শনিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। এটি ছেড়ে যায় ৮টা ৫ মিনিটে।অতিরিক্ত চারটি স্পেশাল ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া আরো ৬৬টি ট্রেন ছেড়ে যাবে সারাদিনে।খুলনাগামী ট্রেনের বিলম্বের ছাড়ার কারণ হিসেবে প্ল্যাটফর্মে অবস্থানরত এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল যখন খুলনা থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে ঢাকার উদ্দেশ্যে তখনই একটি বগির চারটি চাকা লাইন থেকে সরে যায়। ট্রেনটি আবার লাইনে তুলতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। এজন্য ট্রেনটি দেড় ঘণ্টা দেরিতে এসেছে। একই তথ্য আরো কয়েকজন জানিয়েছে।তবে এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন মাস্টার মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং প্ল্যাটফর্ম মাস্টার হানিফ আলী জানেন না বলে জানান।
এদিকে, স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হওয়ার ব্যাপারে খুলনাগামী কয়েকজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রনিকুল ইসলাম যাবেন যশোর। তিনি বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে ট্রেন ছাড়ছে। এসব দেখার মতো কেউ নেই। যাত্রীদের জন্য কেউ নেই। দুই-চার জন রেলওয়ে কর্মীর কাছে জানতে চাইলেও কিছু জানায়নি তারা যে, কেন দেরি হচ্ছে।নীলসাগর ট্রেনে দিনাজপুর যাচ্ছেন ইলিয়াস আলী। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা লেট। জানি না আরো কত পরে ছাড়বে। খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ট্রেনেও যদি এত দেরি হয়। এখন তো দেখছি বাসই ভালো।নাসরিন নীলিমা নামের একজন বলেন, বাচ্চা মেয়ে নিয়ে আসছি। খুব কান্না করছে মেয়েটি। জানি না আরো কত দেরি হবে।নীলসাগর ট্রেনটি সকাল ৮টায় কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি স্টেশনে এসে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। রংপুর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি সকাল ৯টার সময় ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত স্টেশনেই আছে। ট্রেনটি ছাড়তে আরো দেরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্লাটফর্ম মাস্টার।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার মো. শাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মানুষের কল্যাণেই ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে। কারণ মানুষ ওঠানামা করার জন্য প্রতি স্টেশনে দুই মিনিটের স্থানে পাঁচ মিনিট থামছে। এতে করে দেরি হচ্ছে। আর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঠিক কী কারণে দেরি হয়েছে, তা আমি জানি না। আর যদি একটি বগি লাইনচুত্যও হয় সেটা আমার জানার কথা না। কারণ ওটা আমার রেঞ্জের ভেতরে পড়ে না।এদিকে, ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের চাপে এখনো পুরোপুরি জেগে ওঠেনি রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো।শনিবার সকালে গাবতলী, মহাখালী টার্মিনাল এবং কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের আনাগোনা কিছুটা বাড়ে।কিছু সড়কে যানজটে যাত্রী ভোগান্তির খবর পাওয়া গেলেও দুপুর পর্যন্ত ঢাকা থেকে সময় মতই বাস ছেড়ে গেছে বলে কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়।২২ অগাস্ট সারাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে আর ঈদের সরকারি ছুটি আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে। মাঝে রোব ও সোমবার অফিস-আদালত খোলা থাকবে। তবে অনেকেই এই দুইদিন ছুটি নিয়ে আগেভাগেই বাড়ির পথ ধরতে শুরু করেছেন।ফলে সবমিলিয়ে সড়কপথে ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত স্বস্তিদায়কই রয়েছে।
গাবতলী টার্মিনালে সকালে যাত্রীদের চাপ দেখা না গেলেও খুলনা-যশোরগামী কয়েকজন যাত্রী জানালেন, বাসের জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।এ বিষয়ে সৌখিন পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে বাস আটকা পড়েছে। রাতের বাসগুলো এখনও এসে পৌঁছায়নি।যশোর-খুলনার পথে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক রবিনও জানালেন দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরি পারাপারে ১৪-১৫টি বাস আটকে আছে তাদের। তবে পর্যাপ্ত বাস থাকায় আধা ঘণ্টা পরপর ছাড়ছে বলে জানান তিনি।গাবতলীতে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারের সামনে সপরিবারে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শফিউল আলম। ছুটি নিয়ে এবার আগেই গ্রামের বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন তিনি।
শফিউল বলেন, সরকারি ছুটি এখনও শুরু হয়নি, সেকারণেই টার্মিনালে এখনও অস্বস্তিকর ভিড় নেই। তবে ফেরি পারাপারে ঝামেলা হয় কিনা সেই ভয়ে আছি।মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, শেরপুর এবং সিলেট ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার বাস ছাড়ে। ময়মনসিংহ পথে কোনো বাসেই অগ্রিম টিকেট দেওয়া হয় না।মহাখালী টার্মিনালে যাত্রী ইমরান রুকসাদ বলেন, ভিড়ের মধ্যে পড়তে চাচ্ছিনা বলেই আগেভাগে ছুটি নিয়েছি। টার্মিনালে এসেই টিকেট পেয়েছি, কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি, বাসও সময় মতই ছাড়বে।এদিন কল্যাণপুরে যাত্রীদের কোনো চাপ দেখা যায়নি। তবে দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক আসিফ।গাইবান্ধা যাওয়ার জন্য আল-হামরা পরিহবনে সামনে অপেক্ষায় থাকা সুমন মিয়া বলেন, সকালে এসেই টিকেট পেয়ে গেছি। সড়কে যানজট না থাকলেই হয় এখন।তবে ঈদ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী এবং মহাসড়কে গাড়ির চাপ দুটোই বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও পরিবহন মালিক সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছরের মত এবারও বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ‘ভিজিলেন্স টিম’ কাজ করছে।গাবতলী বাস টার্মিনালের ভিজিলেন্স টিমের পরিদর্শক ফয়সাল হাসান বলেন, এখনো সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার তিনদিন বাকি, তাই যাত্রীদের চাপ বেশ কম। তবে আস্তে আস্তে চাপ বাড়বে।টার্মিনালগুলোতে যাত্রীরা যাতে কোনো ভোগান্তির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদের লোক থাকছে ঢাকার সবগুলো টার্মিনালে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিদর্শনে আসছেন প্রতিদিনই।