তিন বছর আগে অনেক ধারদেনা করে কাতার গিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের সবুজ মিয়া। ঈদের ছুটি কাটাতে দেশে ফিরছেন তিনি। সেই খুশিতে তাঁকে আনতে মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।কিন্তু ফেনীতে গরু বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেছে তাঁদের মাইক্রোবাস। মারা গেছেন সবুজের পরিবারের পাঁচ সদস্য ও মাইক্রোবাসের চালক। আনন্দের পরিবর্তে সবুজের বাড়িতে এখন কান্নার রোল।রোববার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ফেনীর মুহুরীগঞ্জ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পর থেকে নিহতদের লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের মটবী ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িতে চলছে আহাজারি। স্বজনরা শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, অনেকে মাটিতে গড়াগড়ি করছেন।তাঁদের সান্ত¡না দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা।নিহত ব্যক্তিরা হলেন কাতারপ্রবাসী সবুজ মিয়ার ছেলে নাহিদুল ইসলাম শুভ (৭) ও মাইদুল ইসলাম নোমান (২), শাশুড়ি জাহানারা বেগম (৫৫), ভায়রার মেয়ে পপি আক্তার (১৫) ও বোন রুনা আক্তার (৩৫) এবং মাইক্রোবাস চালক আব্বাছ মিয়া (৪০)। চালকের বাড়ি চন্দ্রগঞ্জের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। অন্য সবার মান্দারীর মটবী গ্রামে। নিহতদের মরদেহ ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহতদের স্বজনরা জানায়, তিন বছর আগে ধারদেনা করে কাতার যান সবুজ মিয়া। স্ত্রী-সন্তানরা থাকত বাবার বাড়িতে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটি নিয়ে সবুজ রোববার দিবাগত রাতে দেশে আসেন। তাঁকে আনতে মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে উদ্দেশে রওনা দেন পরিবারের ১২ সদস্য। ফেনীর মুহুরীগঞ্জ সুলতানা ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছলে তাঁদের মাইক্রোবাসকে গরুবোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক ও সবুজ মিয়ার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হন। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসের আরো সাত যাত্রী আহত হন। আহতদের ফেনী ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাথা, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখম হয়।নিহত জাহানারা বেগমের ভাই মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এ মৃত্যুর কথা আমরা ভাবতেও পারি না। সবুজ ছুটি নিয়ে দেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে এলো। আর এখন চিরদিনের জন্য ছয়জনের বিদায় হলো।’ অসহায় পরিবারগুলোর জন্য সরকারের কাছে সহায়তার দাবি জানান তিনি।ফেনীর মুহুরীগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব আলম জানান, দুর্ঘটনায় দুই শিশু, তিন নারী ও এক পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।