আজ ২৮ আগস্ট। নওগাঁর মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক পাকুড়িয়া গণহত্যা দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী মান্দায় চালাই এক নারকীয় হত্যাকান্ড।সারাদেশের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় জেগে ওঠে, তখন নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদর হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে পাকুড়িয়া গ্রামে ২৮ আগষ্ট সকালে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালিয়ে জনসভার নাম করে স্থানীয় পুরুষ গ্রামবাসীকে একে একে ডেকে নিয়ে আসে বর্তমান পাকুড়িয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এরপর সেখানে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের গুলি চালিয়ে নিরাপরাধ গ্রামবাসীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। তবে এ সময় গায়ে রক্ত মেখে নিঃশ্বাস চেপে রেখে মৃত্যুর ভান করে ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান ১৯ জন। পরে কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যান আহতদের মধ্যে অনেকেই। সে সময় পাকুড়িয়া পরিণত হয়েছিল যেন এক বিধবা পল্লীতে। যারা শরীরে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন তারা আজো সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে করে আঁতকে উঠেন, আজো কেঁদে ওঠেন হারানো স্বজনদের কথা মনে করে। এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম নির্মম পৈশাচিক গণহত্যার ঘটনা।

অথচ সেই নারকীয় ঘটনার ইতিহাস আজও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। তেমন কোন উদ্যোগও নেয়া হয়নি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে। ৪৫ বছর যাবত এই দিনে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় মিলাদ মাহফিল করা হলেও সরকারীভাবে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি আজও। অবিলম্বে সরকারী ভাবে পাকুড়িয়া গণহত্যার ইতিহাস, শহীদদের কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ, স্মৃতি রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, এবং দিনটিকে সরকারীভাবে পালনের জোর দাবী জানিয়েছেন শহীদ পরিবারসহ এলাকাবাসী।

আশ্চর্য্যের বিষয় পাকুড়িয়ার শহীদ ১২৮ জনের কেউ আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকুও পায়নি। শহীদ ১২৮ জনকে “শহীদ মুক্তিযোদ্ধা” হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্ঠি কামনা করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মহল।
প্রতি বছরের মতো এবারো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী ও পাকুড়িয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে আজ মঙ্গলবার সকালে স্মৃতিচারণ,আলোচনা সভা মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় আ’লীগ,বিএনপি,জাতীয়পার্টি,সিপিবি’র নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেছে।