অনৈতিকভাবে সাময়িক পাঠদানের অনুমতি দেওয়া দুই শিক্ষককে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ফেরত দেওয়ার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কিসামত চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস বর্জন অব্যাহত রেখে বিক্ষোভ করছে তারা।এরআগে বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) সকালে শিক্ষকদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ঘোষণা করে শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটি।শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কিসামত চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ২৪৬ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য আটজন শিক্ষক রয়েছেন। এরই মধ্যে গত বুধবার (২৯ আগস্ট) হঠাৎ ওই বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক মোসলেহা বেগমকে মহিষখোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষক সেলিনা বেগমকে কুমড়িরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাময়িক পাঠদানের অনুমতি দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এ দুই শিক্ষক তাদের নিজের সুবিধার জন্য তদবির করে নিজ এলাকায় সাময়িক পাঠদানের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

এদিকে কিসামত চন্দ্রপুর সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে পড়াশোনা বিঘœ ঘটেছে বলে অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জরুরিভাবে ৩০ আগস্ট বিকেলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু সেখানে সমাধান না হলে অভিভাবকরা পরদিন বিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। সেই থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছে খুদে শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেবেকা আক্তার, চতুর্থ শ্রেণির আর্জিনা, আরফিনা ও পরিমল জানায়, তাদের গণিত ও প্রাক-প্রাথমিকের দুই শিক্ষককে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত তাদের ক্লাস বর্জন চলবে।নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, সাম্প্রতিক সময় উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব নিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এ শূন্য পদ পুরনের নামে বদলি বাণিজ্যে মেতে উঠেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এন এম শরীফুল ইসলাম।

‘বিধি সম্মত না হলেও ৫-১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অর্ধশত শিক্ষককে বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ে সাময়িক পাঠদানের অনুমতি দিয়েছেন’ বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষকরা।কিসামত চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, অফিস আদেশ ছাড়াই দুই সহকারী শিক্ষককে অন্যত্র পাঠাদানের জন্য পাঠান উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এ দুই শিক্ষককে ফেরতের দাবিতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বদিয়ার রহমান বলেন, ‘শিক্ষককে বদলি বা ডেপুটিশনে দেওয়ার ক্ষমতা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নেই। শিক্ষকদেরকে টাকার বিনিময়ে নিজের এলাকায় পাঠদানের অবৈধ অনুমতি দিয়েছেন। যা কোনো অফিস আদেশ নয়।‘শিক্ষা অফিসারের এ অবৈধ বদলি বাণিজ্য বন্ধ ও শিক্ষকদের স্ব স্ব বিদ্যালয়ে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন চলবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এন এম শরীফুল ইসলাম ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, চলতি দায়িত্বের কারণে বেশ কিছু পদ শূন্য হয়। তাই শিক্ষকদের চাহিদা অনুযায়ী (যার যে বিদ্যালয়ে পছন্দ) সাময়িক পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ অনুমতি দেওয়ার সাংবিধানিক ক্ষমতা না থাকলেও শিক্ষকদের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে। যা সাময়িক, স্থায়ী নয়। তাই এটার কোনো অফিস আদেশও নেই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষককে অন্যত্র পাঠদানের অনুমতি দিয়ে ঠিক তিনি করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।