গাইবান্ধার সদর উপজেলার লক্ষীপুর নেংটিরটারীর সালমা খাতুন। পিতার মৃত্যুর পর মানসিক প্রতিবন্ধি মায়ের সংসারে অভাব অনটনে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সুযোগ নিয়ে মুসলিম পরিচয়ে চার বছর আগে প্রেমের ফাঁদে ফেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুরের মনি শাহ রায়ের ছেলে গাইবান্ধার (ভাই ভাই হোটেলের) শ্রমিক পল্লব রায় ওরফে পলাশ। কিছুদিন পর সেখানকার ডাব ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেনের বাড়িতে একটি রুম ভাড়ায় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে পলাশ সালমা নিয়ে থাকা শুরু করে। সালমা বিয়ে দাবি জানালে বোনের বিয়ে দেয়ার পর তাকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশ্বাস দেয় পলাশ। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও বিয়ে না করে নানা টালবাহানা করতে থাকে।

অবশেষে গত ১৫/২০ দিন আগে সালমা কৌশলে পলাশের সাথে তার গ্রামের বাড়ি দেখতে আসে এবং জানতে পারে সে সনাতন ধর্মাবলম্বী। এরপর ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে পলাশ সালমা কিছু না বলেই তিন দিন আগে নিজ বাড়িতে এসে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

শনিবার বিকেলে বিয়ের দাবি নিয়ে সালমা পলাশের বাড়িতে এসে অনশন করে। এসময় পলাশ পালিয়ে গেলেও পলাশের মা অনিতা রানী ও বাবা মনি সাহ তাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান প্রামাণিক এসে মেয়েটিকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দেয় বলে অভিযোগ মেয়েটির। খবর পেয়ে রোববার ভোররাতে ওই বাড়িতে গেলে সালমাকে একটি ঘরে একা তালাবদ্ধ অবস্থায় কাঁদতে দেখা যায়। এসময় বাড়ির সকলেই পলাতক ছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সামলা জানায়, চেয়ারম্যান মেম্বার এসে তাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে জেলে দেয়ার ভয় দেখিয়েছে। তার কোন বিচার নাই, উল্টো শাস্তি হবে বলেও জানিয়েছে তারা। এছাড়াও তাকে অনেক মারপিট করে তার ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও টাকা পয়সা কেড়ে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ন্যায় বিচার দাবি করেছেন সালমা। এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাশের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা পলাশের মা অনিতা রানী বেড়িয়ে এসে বলেন, চেয়ারম্যান তালা দিয়ে চাবি নিয়ে গেছে। মেয়ের মোবাইল তার কাছে আছে। আমরা যা করেছি চেয়ারম্যান মেম্বারের কথায় করেছি।

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান প্রামাণিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওসির নির্দেশে মেয়েটিকে রাখা হয়েছে। তবে নির্যাতনের বিষয় সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। আদিতমারীর থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, চেয়ারম্যানের মুখে এমন একটি ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মেয়েটির নিরাপত্তায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেয়া ঠিক হয়নি। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেয়েটিকে উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এদিকে এমন ঘটনায় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।