দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা প্রবাসীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেবে কাতার। প্রথম উপসাগরীয় দেশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির জারি করা নতুন আইন অনুযায়ী প্রতিবছর ১০০ জন বিদেশিকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে। ওই আইনে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগকর্তার অনুমতি বা এক্সিট ভিসা ছাড়াই নিজে দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কাতারের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন জারি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, নতুন আইনে কাতারের নাগরিক এমন মায়ের সন্তান ও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাতারে বসবাস করা বিদেশিরা অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়া মূল্যবান কর্মদক্ষতাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। দেশটিতে প্রায় ২৭ লাখ বিদেশি বসবাস করে।

স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া বিদেশিরা দেশটির নাগরিকদের মতোই সমান সামাজিক সুরক্ষা পাবেন। এই সুবিধার মধ্যে থাকবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি স্কুলে শিক্ষার সুযোগ। এছাড়া সরকারি চাকরিতেও অগ্রাধিকার পাবেন তারা। নতুন আইন অনুযায়ী কাতারের সশস্ত্র বাহিনীতেও কাজ করার সুযোগ পাবেন স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া প্রবাসীরা।

স্থায়ী অধিবাসী হিসেবে অনুমতি পাওয়া প্রবাসীদের এখন কাতারে ব্যবসা শুরু করতে সেদেশের কোনও নাগরিককে আর বাধ্যতামূলকভাবে অংশীদার করতে হবে না। এছাড়া নতুন আইন অনুযায়ী নিজেও সম্পত্তি কিনতে পারবেন স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া প্রবাসীরা। নতুন আইন কার্যকর হলে স্থায়ী অনুমতি পাওয়া প্রবাসীরা নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই কাতার ত্যাগ ও প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এই অনুমতি না পাওয়াদের ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক থাকবে।

কাতারের সেনাবাহিনীতে এক দশকেরও বেশি সময় কাজ করা সুদানের এক নাগরিক আল জাজিরাকে বলেছেন, স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে তাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০৩০’ এর অংশ হিসেবে নতুন এই আইন জারি হয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী দশ বছরের মধ্যে স্থিতিশীল ও আধুনিক এক কাতার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

কাতারের সংবাদপত্র আল আরবের প্রধান সম্পাদক আবদাল্লাহ আল আতবাহ বলেন, নতুন এই আইন আমাদের অনেক আরব ভাইদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব ভাইদের অনেকেই আমাদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসছেন আর প্রতিবেশীদের অবরোধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কাতারকে সমর্থন করে সম্মানজনক অবস্থান নিয়েছেন।

২০১৭ সালের জুনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর। সন্ত্রাসবাদে সহায়তা ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতায় ইন্ধনের অভিযোগে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দোহা তা অস্বীকার করে আসছে।

আতবাহ বলেন, নতুন এই আইন কাতারের মানবিক খাতে বিনিয়োগের প্রথম পদক্ষেপ। যা ওষুধ, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কাতারকে সাহায্য করবে। কাতারের এক কর্মকর্তা বলেন, অগ্রণী এই আইন আধুনিক ও টেকসই উন্নয়নের জাতীয় কৌশলের অংশ। বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ কাতার। দেশটি গড় মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশের গড় জাতীয় আয়ের চেয়ে যার পরিমাণ বেশি।