গাজীপুরে ১৭ মামলার পলাতক আসামি ও স্থানীয় মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক বন খেকো জসিম উদ্দিন ইকবাল ওরফে ‘মুচি জসিমের’ (৩৮) গুলিবিদ্ধ লাশ শুক্রবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা সদরের মৃত তোফাজ্জল হেসেনের ছেলে।

কাপাসিয়া থানার ওসি মো. আবু বকর ছিদ্দিক জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের ভুলেশ্বর এলাকায় শুক্রবার ভোর রাতে দু’দল সন্ত্রাসীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত এক যুবককে সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যুবকটিকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে ওই যুবকটির পাশে পড়ে থাকা ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য নিহতের লাশ শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা মর্গে গিয়ে লাশটি জসিম উদ্দিন ইকবালের বলে সনাক্ত করে।

স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগের ১৮টি মামলা ছাড়াও জসিম উদ্দিন ইকবালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনায় আরো মামলা রয়েছে। এরমধ্যে বনবিভাগের দু’টি মামলায় ৬মাসের করে কারাদন্ডাদেশ হয় তার বিরুদ্ধে। অন্য প্রায় সবক’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। প্রায় ১৭টি মামলার পলাতক আসামী মুচি জসিম দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে বলে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ জসিমকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি। এদিকে জসিম গ্রেফতারের খবরে বৃহস্পতিবার রাতে কালিয়াকৈরে স্থানীয়রা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। শুক্রবার মুচি জসিম নিহতের খবরে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

কে এই মুচি জসিম?
প্রায় ১৮/২০ বছর আগে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় জুতা তৈরির একটি কারখানায় পিয়ন পদে চাকরি নেয় কিশোরগঞ্জের জসিম উদ্দিন ইকবাল। এর আগে কিছুদিন টোকাইয়ের কাজও করে সে। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই জুতা বানিয়ে ওই কোম্পানিতে সরবরাহ করতে শুরু করে জসিম। এজন্য এলাকায় মুচি জসিম নামে তার পরিচিতি পায়।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় জাতির পিতা কলেজ মাঠে আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন মুচি জসিম। পুলিশের বিশ্বস্ততা অর্জন করে পাল্টে ফেলেন নিজের জীবন। বন বিভাগের প্রায় ৩০০ বিঘা জমির বন কেটে তা দখল করে গড়ে তুলেন নতুন এক গ্রাম। আর এতেই শতকোটি টাকার মালিক বনে যান মুচি জসিম। তিনি স্থানীয়দের কাছে ছিলেন আতংক। তার কুকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। বাদ যাননি সরকারি কর্মকর্তা ও সংবাদিকও। কালিয়াকৈরে তিনি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক।